একটি গুলি, একটি জীবন, আর একটি আন্দোলনের নাম—ওসমান হাদি। ঢাকার রাজপথ থেকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতাল—শেষ পর্যন্ত থেমে গেল এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। একজন তরুণ নেতা রাজনীতিতে নেমে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন। কেন তার মৃত্যু ঘিরে দেশজুড়ে শোক আর ক্ষোভ।
গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি আর নেই। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। একই তথ্য জানানো হয় ইনকিলাব মঞ্চের অফিসিয়াল পেজেও। হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোক ও আলোড়ন।
ইনকিলাব মঞ্চের পোস্টে দাবি করা হয়, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। এই বক্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সমর্থকরা তাকে একজন সাহসী ও আপসহীন নেতা হিসেবে স্মরণ করছেন, যিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিবাদের রাজনীতি থেকে সরে যাননি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে হাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তিনি লেখেন, আমাদের ভাই হাদি অনন্তের পথে রওনা দিয়েছেন। আবরার আর আবু সাঈদদের মতো হাদি শারীরিকভাবে না থেকেও বাংলাদেশের বুকে আরও গভীরভাবে থেকে যাবেন দীর্ঘ সময়।
সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এক আবেগঘন পোস্টে ওসমান হাদির শাহাদাতের কথা জানান। তিনি লেখেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিক, আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদি ভাই শহীদ হয়েছেন। তার আত্মদান মজলুম জনগোষ্ঠীর মুক্তির সংগ্রামে চিরন্তন প্রেরণা হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা আট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। গত বারো ডিসেম্বর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পনেরো ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।
একজন মানুষ চলে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন প্রশ্ন, প্রতিবাদ আর এক অসমাপ্ত লড়াই। ওসমান হাদি কি শুধুই একটি নাম, নাকি একটি আন্দোলনের প্রতীক—সেই উত্তর দেবে সময়।
