বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েকটি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় গত ১৬ জুন ২০২১ তারিখ বিকাল ৩টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পটুয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে একটি মামলার দায়ের করেন। যার তদন্ত নং-০১/২০২১।

মোঃ নাজমুল হুসাইন স্বাক্ষরিত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বামনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ০৩.০৮.০০.০১.০০২১৩.৪৮৩ স্মারকে রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, বামনা উপজেলার ৫০০টি পরিবারে ৫০০টি নলকূপ বরাদ্দের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু প্রতি পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে ১২ হাজার ৫শ টাকা গ্রহণপূর্বক একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন।

বামনা উপজেলা পরিষদের কাম সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর নাজমুল হুদার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান লিটুর গোপনীয় সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু নাজমুল হুদাকে দিয়ে নলকূপ দেয়ার কথা বলে ১২ হাজার ৫শ টাকা করে গ্রহণ করেছেন এবং অবৈধভাবে নাজমুল হুদাকে দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি তালিকাও তৈরী করিয়েছেন।

এজাহারে আরোও উল্লেখ করা হয়, বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান, রামনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আ. খালেক এবং ডৌয়াতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের ইউনিয়নের অনেক বাসিন্দাদের কাছ থেকে নলক‚প দেয়ার কথা বলে আসামী মোঃ সাইতুল ইসলাম লিটু ১২ হাজার ৫শ টাকা ঘুষ নিয়েছেন কিন্তু কাউকে নলক‚প দেননি। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে এভাবে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে মোট ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা, অবৈধভাবে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার করার মাধ্যমে অসদাচরণ করার অভিযোগে ১৬১/৪২০ বাঃদঃবিঃ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এজাহার দায়ের করা হয়।

এদিকে, বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর বিরুদ্ধে দুদকে দেয়া একই উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস তালুকদারের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাইতুল ইসলাম লিটুর সহধর্মিণী সারাজাহান কল্পনা একজন গৃহিণী। তার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। অথচ তার সোনালী ব্যাংক বামনা শাখার হিসাব নাম্বারে গত ১ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ২৫ মে ২০১৭ পর্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করলেই প্রমাণিত হবে।  

এ বিষয়ে বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম লিটু গণমাধ্যমকে বলেন, আমি জীবনে দুইটাকাও ঘুষ খাই নাই। আরতো লাখ লাখ টাকার ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ। মূলত একটি জাতীয় দৈনিকের পেপার কাটিংয়ের সূত্র ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় এমপি এগুলো আমার বিরুদ্ধে করিয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল তখন তাদের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক দূরত্ব।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালী উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম লিটুর ঘুষের অভিযোগের বিষয়ে নতুন একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

এনবিএস/ওডে/সি

news