যশোরে সরিষার বাম্পার ফলন

এবার যশোরে ২৪ হাজার ৮শ’ ৪৮ হেক্টর জমিতে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে জমি থেকে ৯৫ শতাংশ সরিষা ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় এবার সরিষার চাষ হয়েছে দ্বিগুণ।

জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে বেশি আবাদ হয়েছে শার্শায়। এই উপজেলায় চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৩শ’ ৬৬ হেক্টর জমি। এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, কৃষিতে সরকারের প্রণোদনা, কম খরচে অধিক ফলন, পাশাপাশি সরিষা বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া সব মিলিয়ে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষক। এতে দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে যশোরের সরিষা।

জানা যায়, গত বছর যশোরের ৮ উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছিল ১৬ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে। সেখানে এবার চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮শ’ ৪৮ হেক্টর জমি। ভাল দাম পাওয়ায় এবং ভোজ্য তেলের দাম অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির কারণে যশোরের কৃষকরা এবার আগ্রহ দেখিয়ে বেশি সরিষা চাষ করেছে। সরিষা চাষে ঘটেছে বিপ্লব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় জানায়, এবার এ মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাঠের অবস্থা খুবই ভালো ছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে প্রতি উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। তথ্যানুযায়ী সব এলাকাতেই চাষ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সব সরিষা মাঠ থেকে ঘরে উঠবে। যারা ইতিমধ্যে সরিষা তুলেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বিক্রির জন্যে তা বাজারেও তুলেছেন।

জেলার বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলা বুদোপুরের কৃষক তবিবর রহমান (৭২) ও একই গ্রামের মৃত গনি মোল্লার ছেলে নাসির হায়দার জানান, এবার বৃষ্টিপাতে সরিষা নষ্ট হয়নি। তারা ৪ বিঘা করে সরিষা চাষ করেছেন। বাজারে ৩ হাজার ২শ’ টাকা করে নতুন সরিষা বিক্রি করছেন। পুরোনো সরিষা ৪ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। দাম নিয়ে এবার কৃষকরা খুশি বলে তারা জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষাকে বিকল্প হিসেবে দেখছে সরকার। সেই সাথে খরচ ও চাষের সময় দুটোই কম হওয়ায় জেলায় কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা চাষ। দেশের অর্থনীতিতে ও ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে যশোরে উৎপাদিত সরিষা।

তিনি আরো বলেন, সরিষার আবাদ বৃদ্ধির জন্য নানা কর্মসূচি ছিল কৃষি বিভাগের। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কৃষক সমাবেশের পাশাপাশি কৃষককে জমির জন্য প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সার্বিক এই পদক্ষেপগুলোর কারণে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।

এছাড়াও, আগামী ৩ বছরে দেশের ভোজ্যতেলের যে চাহিদা তার ৪০ শতাংশ উৎপাদিত সরিষা দিয়ে মেটানোর টার্গেট কৃষি অধিদপ্তরের। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আর এক বছরেই চমক সামনে এসেছে। কৃষিবান্ধব সরকারের পক্ষে নানাবিধ প্রণোদনা, কৃষি কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারকিতেও উদ্বুদ্ধ করেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে

এনবিএস/ওডে/সি

news