গ্রামীণ কৃষকদের কাজ, পানি শোধন প্ল্যান্ট, গাছ লাগানোর দৃশ্য] দেশের তৃণমূল পর্যায়ে জীবনমান উন্নয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো শুধু তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে না, বরং সমাজের কল্যাণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এটি দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক।
আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশের অনেক কৃষক পিছিয়ে রয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করেও তারা ক্ষতির মুখে পড়েন, যা গ্রামীণ সমাজে দারিদ্র্য বাড়ায়। এই সমস্যা মোকাবিলায় দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলে উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছর বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও রাজশাহীতে ১১,০০০ কৃষককে পরিবেশবান্ধব আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্থানীয় একটি সংস্থার মাধ্যমে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করেছে।
নিরাপদ পানির সংকট মোকাবিলায় বেসরকারি উদ্যোগ সরকারের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করছে। টেলিকম সংস্থা রবি কামালাপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ফেনী ও কুমিল্লার মতো বড় রেলস্টেশনগুলোতে পানি শোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় এই উদ্যোগ ভ্রাম্যমাণ মানুষ, বিশেষ করে গৃহহীন শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দূষিত পানি থেকে সৃষ্ট রোগ থেকে রক্ষা করছে।
গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহে বিএটি বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলায় ১২৬টির মধ্যে ৪৮টি পানি শোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, দৌলতপুর, কুমারখালী ও ভেড়ামারা উপজেলায় এই প্ল্যান্টগুলো হাজার হাজার কৃষক ও তাদের পরিবারকে পানিবাহিত রোগ ও আর্সেনিক দূষণ থেকে রক্ষা করছে। এছাড়া, বিএটি বাংলাদেশ কুষ্টিয়ার লালন শাহ সেতু, কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক ও জিকে খাল এলাকায় স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালাচ্ছে। ১৯৮০ সাল থেকে তারা দেশব্যাপী ১৩ কোটির বেশি গাছের চারা বিতরণ করেছে।
কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে সিনজেন্টা বাংলাদেশ কাজ করছে। তাদের ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, “তৃণমূল কৃষি ও পরিবেশ সুরক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এই প্রচেষ্টাগুলোর পেছনে সঠিক গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।”
এই বেসরকারি উদ্যোগগুলো দেশের কৃষি, পানি সরবরাহ ও পরিবেশ সংরক্ষণে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। এগুলো তৃণমূলের মানুষের জীবনমান উন্নত করার পাশাপাশি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করছে।


