বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও, বৈশ্বিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি সংস্থা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে এই কারখানা স্থাপনের দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে দেশের তামাকবিরোধী সংগঠন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

নিকোটিন পাউচ দেখতে অনেকটা ছোট চা-ব্যাগের মতো, যার ভেতরে থাকে রাসায়নিক মিশ্রিত নিকোটিন ও নানা সুগন্ধি। ফিলিপ মরিস তাদের এই পণ্যকে 'অ্যান্টি-নিকোটিন প্রোডাক্ট' বা নিকোটিন বিরোধী পণ্য বলে দাবি করলেও, বিশেষজ্ঞরা একে তামাক কোম্পানির নতুন বাণিজ্যিক কৌশল বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

কেন এত বিতর্ক?
বেজা তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে বলছে, বাংলাদেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন বা রপ্তানির উপর কোন স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই। তারা দাবি করছে, এটি একটি এফডিএ অনুমোদিত 'অ্যান্টি-নিকোটিন' পণ্য, যা সাধারণ সিগারেটের চেয়ে কম ক্ষতিকর।

কিন্তু এই যুক্তি মানছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ অ্যান্টি-টোব্যাকো অ্যালায়েন্সের মতো সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই এই অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, "নিকোটিন পাউচ মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন করে নিকোটিন আসক্তি তৈরি করার একটি চালাকিপূর্ণ পন্থা।"

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইতিমধ্যেই নিকোটিন পাউচকে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরীর মতো বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, এই পণ্য মুখের আলসার থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির একটি গবেষণা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের কারণে চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হারানোর ফলে দেশের经济损失 হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা同期 তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের চেয়েও অনেক বেশি।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
ফিলিপ মরিস ইতিমধ্যেই তাদের এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ৫৮.২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। তবে, পরিবেশগত ছাড়পত্রসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে এখনও বাকি সময় আছে। তামাকবিরোধী গোষ্ঠীগুলি সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক এই অনুমোদন যেন立即 বাতিল করা হয়।

এই মুহুর্তে সব Augen এখন সরকারের উপর। বাণিজ্যিক স্বার্থ নাকি জনস্বাস্থ্য—কোন দিকে ঝুঁকবে বাংলাদেশ, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

news