ইয়েমেনি অভিনেত্রী ও মডেল ইনতিসার আল হাম্মাদি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের কারাগার থেকে প্রায় পাঁচ বছর পর মুক্তি পেয়েছেন। রোববার (২৬ অক্টোবর) তার আইনজীবী খালিদ আল কামাল এই মুক্তির খবর নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইনতিসারের এই পুরো মামলাটিকে অন্যায্য এবং নির্যাতনে পরিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে।

আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, ইনতিসারকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইয়েমেনের হুতি-নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় বিদ্রোহীরা আটক করে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। পরবর্তীতে একটি হুতি আদালত তাকে তথাকথিত ‘অশোভন আচরণ’ ও ‘মাদকদ্রব্য রাখার’ অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে।

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন
ইনতিসারের সঙ্গে সে সময় আরও তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ইনতিসার ও ইউসরা আল নাশরি একই মেয়াদের সাজা পান, আর অন্য দুই নারীকে যথাক্রমে এক ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইনতিসারের গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, তীব্র সমালোচনায় মুখর ছিল। তারা জানিয়েছে, তাকে চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এমনকি তার ওপর বর্ণবিদ্বেষমূলক গালাগালও করা হয়েছিল। জানা গেছে, জোর করে কয়েকটি অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল।

২০২১ সালেই মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছিলেন, হতাশায় ইনতিসার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীকী মামলা
ইয়েমেনের বহু বিশিষ্ট নাগরিক তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন— ইনতিসারের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি। তাদের মতে, এই মামলাটি হুতি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নারীদের ওপর নিপীড়ন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমননীতির প্রতীক।

ইথিওপীয় মা এবং ইয়েমেনি বাবার সন্তান ইনতিসার আল হাম্মাদি গ্রেপ্তারের আগে টানা চার বছর মডেল হিসেবে কাজ করেছেন এবং দুটি ইয়েমেনি টেলিভিশন সিরিজে অভিনয়ও করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি ঐতিহ্যবাহী পোশাক, জিন্স বা লেদার জ্যাকেট পরা নানা ছবিতে হাজির হতেন। কখনো তিনি মাথায় ওড়না দিতেন, আবার কখনো বা উন্মুক্ত চুলে। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে তার হাজারো অনুসারী রয়েছে।

২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে হুতি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নারীদের ওপর সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটি বলে আখ্যা দিয়েছে।

.

news