যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ বাড়ছেই, গ্রেপ্তার নয় শতাধিক

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে অবস্থান কর্মসূচিও চালিয়ে যাবেন তারা।

অস্টিনে টেক্সাস ইউনিভার্সিটির ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ দমনে সেনারা হস্তক্ষেপ করার পর সেখানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আল-জাজিরার সংবাদদাতা হেইদি ঝাও-ক্যাস্ট্রো সেখান জানান, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের লনে দ্রুত স্থাপিত শিবিরটি ঘেরাও রেখেছে। দাঙ্গা রোধের সাজে সজ্জিত সেনারা সেখানে যেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বলে অন্যথায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে সতর্ক করে দেয়। 

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোয় কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনপন্থীদের টানা বিক্ষোভ চলছে। আটক করা হয়েছে কয়েক’শ বিক্ষোভকারীকে। এতেও তাদের দমানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ক্যাম্পাসগুলোয় চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে।

১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসরায়েলবিরোধী এই আন্দোলন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সেই বিক্ষোভে ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল। 

এবারও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলে আসছেন, তাদের এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিক্ষোভকে তাদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত বলে মনে করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের হাতে শিক্ষার্থীদের ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। 

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের অভিযোগে ১০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর এই বিক্ষোভ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

গার্ডিয়ান এর খবরে বলা হয়, গত সোমবার নিউইয়র্কের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কের ওপরে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের বিশেষ বাহিনী স্ট্র্যাটেজিক রেসপন্স গ্রুপকে (এসআরজি) ড্রোন নিয়ে সতর্ক টহল দিতে দেখা যায়। ‘ইসরায়েলের বোমা, অর্থ দিচ্ছে এনওয়াইইউ, আজ কত শিশু হত্যা করেছ’ এমন প্রচারপত্র বিলির সময় নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ১২০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখান থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮০ জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে চলমান এই বিক্ষোভে ৯০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিক্ষোভ দমনে পুলিশকে ব্যবহার করা নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা হচ্ছে। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসগুলোয় চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, ‘সব মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি আমরা (মার্কিন প্রশাসন) শ্রদ্ধাশীল। তবে বিক্ষোভ থেকে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ভাষা ব্যবহার নিন্দনীয়। ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য ও সহিংসতার হুমকির নিন্দা জানাই আমরা।’সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news