এই সপ্তাহের শুরুতে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পাহালগামে সশস্ত্র হামলাকারীদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের সেনারা টানা দ্বিতীয় দিন ধরে সীমান্তে গোলাবিনিময় চালিয়েছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ঘটনার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হয়েছে—সীমান্ত বন্ধ, বাণিজ্য স্থগিত এবং নিরাপত্তা কর্মী বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পাহালগামের সেই ভয়াবহ হামলার পর থেকে সশস্ত্র পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কাশ্মীরের বাড়িঘর ও বনাঞ্চলে হামলাকারীদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ভারতের সেনাপ্রধান এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলাকারীদের "পৃথিবীর শেষ প্রান্তেও" তাড়া করার ঘোষণা দিয়েছেন। ভারতের দাবি, এই হামলার অন্তত দুজন সন্দেহভাজন পাকিস্তানি, এবং পুরো হামলার পেছনে ইসলামাবাদের হাত রয়েছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যে ভারত ইন্দাস জল চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রী সি.আর. পাতিল শুক্রবার এক ঘোষণায় বলেছেন, "আমরা নিশ্চিত করব যে ইন্দাস নদীর একটি ফোঁটাও পাকিস্তানে যাবে না।" এর জবাবে পাকিস্তান বলেছে, পানিপ্রবাহে কোনো রকম বাধা দেওয়াকে তারা "যুদ্ধের কাজ" হিসেবে বিবেচনা করবে।

এদিকে, পাকিস্তান সব ভারতীয় ফ্লাইটের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় বড় বড় এয়ারলাইন্স যেমন এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি ও দীর্ঘ ফ্লাইট রুটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এয়ারলাইন্সগুলোকে যাত্রীসেবা ও যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে না, তবু নিউ ইয়র্ক, আজারবাইজান ও দুবাইগামী ফ্লাইটগুলোর রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে দিল্লি বিমানবন্দরের ওপর, যা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই উত্তেজনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই তাদের সম্পর্কের সমাধান খুঁজে নেবে। তিনি দুই দেশের নেতাদের সাথে তার পরিচয়ের কথা উল্লেখ করলেও, তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন কিনা সে প্রশ্নের জবাব দেননি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তার দেশের সশস্ত্র বাহিনী "সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত"। তিনি একটি সামরিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে ২০১৯ সালের ভারতের "বেপরোয়া অনুপ্রবেশের" কথা স্মরণ করিয়ে দেন। শরিফ আরও বলেছেন, পাকিস্তান কাশ্মীরের হামলার বিষয়ে একটি "নিরপেক্ষ তদন্তে" অংশ নিতে প্রস্তুত।

এদিকে, দুই পরমাণু-সজ্জিত প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি অব্যাহত থাকায় সীমান্তে গোলাবিনিময় চলছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি সেনারা "অপ্ররোচিত"ভাবে ছোট অস্ত্রের গুলি চালিয়েছে, যার জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যু। ২০১৯ সালে ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে এই অঞ্চলে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি চাইছেন, কিন্তু কোনো সমাধানের আভাস এখনো দেখা যাচ্ছে না।

এই সংকট কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এটি একটি বড় হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংঘাত নিরসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। খবর আলজাজিরার

#কাশ্মীর_সংঘাত #ভারত_পাকিস্তান_তর্ক #সীমান্ত_উত্তেজনা #ইন্দাস_জল_চুক্তি #শান্তি_প্রত্যাশা

news