পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার 'নিরপেক্ষ তদন্তে' অংশ নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। গত ২২ এপ্রিল এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও রয়েছেন। ২০১৯ সালে ধারা ৩৭০ বাতিলের পর এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

খাইবার পাখতুনখাওয়ার কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে এক স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শরিফ বলেন, "পাহালগামের এই মর্মান্তিক ঘটনা অবিরত অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের আরেকটি উদাহরণ। দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।" তার এই বক্তব্য এসেছে এমন সময় যখন ভারত পাকিস্তানকে এই হামলার পেছনে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়দানকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সহযোগী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই হামলার মূল অভিযুক্ত আদিল আহমেদ থোকার পাকিস্তানে গিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং ছয় বছর পর বেশ কিছু পাকিস্তানি সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে।

শাহবাজ শরিফের এই বক্তব্যের আগের দিন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাকিস্তান "আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের করা যে কোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত"।

এদিকে, এই হামলার জবাবে ভারত কঠোর কূটনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির (সিসিএস) জরুরি বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি জানিয়েছেন, উভয় দেশের হাইকমিশনে কর্মকর্তাদের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে। এছাড়া পাকিস্তানি হাইকমিশনের সব প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় ভারত পাকিস্তানের জন্য সাড়্ক ভিসা ছাড়ের সুবিধা স্থগিত করেছে এবং আটারি স্থলবন্দর বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ১৯৬০ সালের ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব স্পষ্ট করেছেন, পাকিস্তান "বিশ্বাসযোগ্য ও চূড়ান্তভাবে সীমান্তপার সন্ত্রাসবাদের সমর্থন ত্যাগ না করা পর্যন্ত" এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।

সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা দ্বিতীয় রাতেও লাইন অব কন্ট্রোলে (এলওসি) ভারতীয় অবস্থানের দিকে পাকিস্তানি সেনারা গুলিবর্ষণ করেছে, যার জবাবে ভারতও পাল্টা গুলি চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এই সংঘাতের প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই - গোটা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংকট নিরসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখা। খবর এনডিভির

#পাহালগাম_হামলা #শাহবাজ_শরিফ #ভারত_পাকিস্তান #কাশ্মীর_সংকট #সন্ত্রাসবাদের_বিরুদ্ধে

news