ভারতের কাপুরুষোচিত হামলায় পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, কোটলি এবং মুজাফফরাবাদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমাদের এই বিশেষ বুলেটিনে আমরা এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য এবং পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরব।

আইএসপিআর-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, গত মধ্যরাতের পর ভারত পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের সুভানুল্লাহ মসজিদ, কোটলি এবং মুজাফফরাবাদে তিনটি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। তিনি এই হামলাকে কাপুরুষোচিত এবং লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই হামলা ভারতের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে। তারা কখনোই পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের সাহস পায়নি।”

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, এই হামলা বেসামরিক এলাকায় চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতীয়রা তাদের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে এই হামলা চালিয়েছে। তারা বাইরে বের হয়ে সাহস দেখাক, আমরা যথাযথ জবাব দেব।” তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান এর চেয়ে অনেক বড় প্রতিক্রিয়া দেবে।” পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর সকল জঙ্গি বিমান বর্তমানে আকাশে রয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।

পিটিভি নিউজের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত একজন নিরীহ শিশু শহীদ হয়েছে এবং একজন নারী ও একজন পুরুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মুজাফফরাবাদে হামলার পর শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, হামলার পর পরই শহরে একাধিক বিকট শব্দ শোনা গেছে।

ভারতীয় সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে এই হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, এই হামলা পাকিস্তান ও আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের সেই স্থাপনাগুলোতে করা হয়েছে, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তারা বলেছে, “এই হামলা সুনির্দিষ্ট এবং সংযত ছিল। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি।” তবে পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে বেসামরিক জনগণের উপর হামলা বলে অভিহিত করেছে।

এই হামলার পটভূমি হলো গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলা, যাতে ২৬ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। ভারত কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ আজ আইএসআই সদর দপ্তর পরিদর্শন করেছেন, যেখানে তাকে ভারতের আগ্রাসী অবস্থানের প্রেক্ষিতে দেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, “ভারত যেকোনো ধরনের হামলা চালালে আমরা তার জন্য প্রস্তুত। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হোক, স্থল হামলা হোক বা বিমান হামলা, আমরা সর্বত্র প্রস্তুত।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “আমরা ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে একাধিক স্তরে যোগাযোগ রাখছি। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য দায়িত্বশীল সমাধানের আহ্বান জানাই।” পাকিস্তান এই ঘটনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করেছে এবং ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পানির প্রবাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভারতের পানি এখন ভারতের জন্যই ব্যবহৃত হবে।” পাকিস্তান এই হুমকিকে যুদ্ধের কাজ হিসেবে বিবেচনা করেছে। পাঞ্জাবের সেচ মন্ত্রী কাজিম পিরজাদা বলেন, “চেনাব নদীর প্রবাহে অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, যা প্রাকৃতিক নয়।” এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি পাকিস্তানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ভারতের সাম্প্রতিক উসকানির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করেছেন এবং বাণিজ্য ও ভ্রমণ সহজীকরণে পাকিস্তানের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

পাকিস্তান এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। দেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং জনগণ একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবেলা করছে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের এই আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমরা এই ঘটনার সর্বশেষ আপডেট নিয়ে আসব।

news