উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন সোমবার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে তাঁর চিরচেনা সবুজ রঙের ব্যক্তিগত ট্রেনে করে চীনের বেইজিংয়ের পথে রওনা হয়েছেন। ধীরগতির হলেও বিশেষভাবে নকশা করা এই ট্রেনটি উত্তর কোরিয়ার নেতারা কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার পুরনো যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের তুলনায় এই বুলেটপ্রুফ ট্রেন অনেক বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। এতে কিমের নিরাপত্তাকর্মী, খাদ্য ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা আছে। এছাড়া আছে বৈঠকের আগের আলোচনা বা এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য আলাদা কক্ষ।

২০১১ সালের শেষে নেতৃত্ব গ্রহণের পর কিম এই ট্রেনে চীন, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া সফর করেছেন।

ট্রেনের ভেতরের বৈশিষ্ট্য

দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ আন বিয়ং–মিন জানান, নিরাপত্তার কারণে একাধিক ট্রেন ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ট্রেনে ১০–১৫টি কামরা থাকে। শয়নকক্ষ শুধুমাত্র নেতার জন্য, অন্য কামরায় থাকেন নিরাপত্তাকর্মী ও চিকিৎসক।

কিমের ট্রেনে সাধারণত থাকে কার্যালয়, যোগাযোগের সরঞ্জাম, রেস্তোরাঁ এবং দুটো সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি রাখার কামরা।

সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় ছবিতে দেখা গেছে কিম সবুজ কামরার পাশে সিগারেট খাচ্ছেন, গায়ে সোনালি নকশা ও প্রতীক আঁকা। অন্য ছবিতে কাঠের প্যানেল দেওয়া কক্ষে বসে আছেন কিম, পাশে উত্তর কোরিয়ার পতাকা।

টেবিলে ছিল সোনালি অক্ষরে খোদাই করা ল্যাপটপ, কয়েকটি টেলিফোন, সিগারেটের বাক্স ও নীল-স্বচ্ছ তরল ভর্তি বোতল, জানালায় নীল–সোনালি পর্দা।

২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, প্রশস্ত কক্ষে চীনা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন কিম। ২০২০ সালে টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ট্রেনে ফুল আকৃতির আলো ও জেব্রা প্রিন্টের চেয়ার ব্যবহার করা হয়।

রাশিয়ার কর্মকর্তা কনস্টান্টিন পুলিকোভস্কি তাঁর বইতে লিখেছেন, কিম জং–ইল ফ্রান্সের প্যারিস থেকে আনা ওয়াইন ও জীবন্ত লবস্টার পরিবেশন করেছিলেন ট্রেনে।

সীমান্ত অতিক্রমের কৌশল

দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ আন জানান, ২০২৩ সালে রাশিয়া সফরে কিমের ট্রেনকে চাকা পরিবর্তন করতে হয়েছিল, কারণ রেললাইনের মাপ ভিন্ন। চীনের ক্ষেত্রে এমন দরকার হয় না, তবে সীমান্ত পার হওয়ার পর চীনের লোকোমোটিভে ট্রেন যুক্ত করা হয়।

চীনের রেলপথে ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ৮০ কিমি/ঘণ্টা, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার রেলপথে সর্বোচ্চ ৪৫ কিমি/ঘণ্টা।

কাদের ব্যবহার করেছেন এই ট্রেন

উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নেতা কিম ইল–সুং ১৯৯৪ সালের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়মিত ট্রেনে বিদেশ সফর করতেন। তাঁর ছেলে কিম জং–ইলও উড়োজাহাজে ভ্রমণে ভয় পাওয়ায় ট্রেনই ব্যবহার করতেন। তিনবার রাশিয়া সফরে শুধুমাত্র ট্রেন ব্যবহার করেছেন।

২০১১ সালে কিম জং–ইল হৃদ্‌রোগে মারা যান এক ট্রেনযাত্রার সময়। সেই কামরা এখনও প্রদর্শিত।

দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা কিম পরিবারের জন্য জনসাধারণের সঙ্গে দেখা ও প্রচারণার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এটিকে আখ্যা দেওয়া হয় ‘দেশজুড়ে কষ্টসাধ্য ট্রেন ভ্রমণ’।

 

news