বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপে আশ্রয় পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশকে নিরাপদ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মানে হলো, এই দেশগুলোর নাগরিকেরা আশ্রয় আবেদন করলে তা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে—কিন্তু
ফ্রান্স প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক ও মাইগ্রেন্টওয়াচ সম্পাদক নিয়াজ মাহমুদ মনে করেন, সমস্যার মূলে রয়েছে ভুয়া আশ্রয় আবেদন। তিনি বলেন, ট্যাক্স ফাঁকি, ভুয়া ব্যবসা, বিমা প্রতারণা থেকে শুরু করে জাল কাগজপত্র দিয়ে আশ্রয়ের চেষ্টা—সব মিলিয়ে ইউরোপের চোখে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তার মতে, এই পরিস্থিতিতে প্রকৃত নির্যাতিত ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ভিকটিমরা নথি ও প্রমাণ নিয়েও আশ্রয়ের আবেদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে অসংখ্য মানুষ ভুয়া গল্প বানিয়ে ভিকটিম সাজতে চেষ্টা করছে। এতে সত্যিকারের আশ্রয়প্রার্থীরা আড়ালে চলে যাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা প্রত্যেকেই দেশের অঘোষিত রাষ্ট্রদূত। আমাদের কর্মকাণ্ডই নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশিরা ইউরোপে বিশ্বাসযোগ্য অভিবাসী হিসেবে পরিচিত হবে, নাকি ভুয়া গল্পকার হিসেবে।”
তবে আশার কথা হলো, আশ্রয়ের আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হলেও আদালতের সুযোগ এখনো খোলা। ইতালি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ আগস্টে রায়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশ নিরাপদ দেশ হলেও ব্যক্তিগত ঝুঁকি বা নির্যাতনের প্রমাণ থাকলে প্রতিটি মামলা আলাদা করে বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক কর্মী, সংখ্যালঘু বা মানবাধিকার কর্মীরা বৈধ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারলে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ আছে।
ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত অবৈধ পথে প্রায় ১ লাখ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকরা। শুধু সমুদ্রপথেই অন্তত ৮ হাজার বাংলাদেশি পৌঁছেছেন ইউরোপে। তারা প্রথমে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন, এরপর আবেদন করেন।
ইতালি প্রবাসী মুজাদ্দেদ আল মামুন জানান, ইতালিতে আবেদন প্রথম ধাপেই বাতিল হচ্ছে বেশি। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপেও আপিলের সুযোগ আছে, আর অনেকে শেষ ধাপে আশ্রয় পাচ্ছেন। একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পর্তুগালে থাকা তরুণ রিফাত শিকদারও।
ইইউ’র নতুন নীতি
বাংলাদেশকে নিরাপদ দেশ ঘোষণার প্রস্তাব এখনো ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সর্বসম্মত অনুমোদন পায়নি। তবে কার্যকর হলে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন দ্রুত বাতিল ও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলছে, বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকারকর্মী ও এলজিবিটিআই সম্প্রদায় এখনো ঝুঁকির মুখে। তাদের জন্য এই নীতি অন্যায্য হতে পারে।
সব মিলিয়ে ইউরোপে বাংলাদেশিদের জন্য আশ্রয়ের লড়াই হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন—আর এর পেছনে দায়ী ভুয়া গল্প, প্রতারণা এবং অভিবাসীদের প্রতি আস্থাহানিই।


