যুক্তরাষ্ট্রে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করতে ২০২১ সালে দেশ ছাড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনিরুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় কর্মসংস্থান সুযোগ থাকায় তিনি বিজনেস অ্যানালিস্ট ও ডাটা সায়েন্সেস-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপও করেন এবং বর্তমানে সেই প্রতিষ্ঠানেই কর্মরত আছেন।

তবে তার ওপিটি পিরিয়ড শেষ পর্যায়ে। তিন বছরের মধ্যে এইচ-১বি (দক্ষ কর্মী) ভিসা পেলে থাকতেই পারবেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ভিসার ওপর ১ লাখ ডলার ফি আরোপ করায় বড় শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মনিরুল জানান, তার প্রতিষ্ঠান বছরে ৮০ হাজার ডলার বেতন দেয়। নতুন করে দক্ষ কর্মী ভিসায় রাখতে হলে প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ডলার স্পন্সর দিতে হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কোম্পানি হয়তো গ্রিন কার্ড বা নাগরিকত্ব থাকা অন্য কাউকে বেছে নেবে।

একই অবস্থায় রয়েছেন তাহমিদ জামান, যিনি ওকলাহোমা স্টেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ওপিটিতে রয়েছেন। নতুন ফি তার চাকরি খোঁজ ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আরও দুশ্চিন্তাপূর্ণ করেছে। তিনি জানান, ‘ভিসার ফি আরোপের আগে বিদেশী কর্মীর নিয়োগের হার ছিল বেশি, এখন কমে গেছে।’

হলো এফ-১ ভিসায় পড়াশোনা শেষে সর্বোচ্চ তিন বছরের কাজের সুযোগ। এরপর যদি কোম্পানি কর্মী রাখতে চায়, এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে এফ-১ ভিসা থেকে এইচ-১বি ভিসায় রূপান্তর হয়ে থাকে। নতুন ফি আরোপের ফলে উচ্চশিক্ষা শেষ বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান পাওয়ার সম্ভাবনা সংকুচিত হচ্ছে। বিপুল ব্যয়ভার বহন না করতে পেরে অনেককে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে।

ট্রাম্পের নতুন আদেশ: প্রতি বছর উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশীকে এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে নতুন ১ লাখ ডলার ফি কম বেতনের কর্মীদের নিয়োগে বাধা সৃষ্টি করবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত ছাড়া, বাংলাদেশীরা যেখানে বছরে গড় ১ লাখ ডলারের নিচে বেতন পান, সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভবত বিদেশী কর্মী নেওয়াতে অনিচ্ছুক হবে।

বর্তমানে এইচ-১বি ভিসার ৭১ শতাংশ ভারতীয়, ১২ শতাংশ চীনা, এবং বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা ১০ শতাংশ। নতুন ফি আরোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন ভারতীয় ও চীনা নাগরিকরা, তবে বাংলাদেশীরাও এ থেকে বাঁচবেন না।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য: যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষে বাংলাদেশীরা মূলত স্থায়ী বসবাস ও কর্মসংস্থান খোঁজে। নতুন ফি আরোপের ফলে অনেক শিক্ষার্থী চাকরি হারাবে, আবার অনেককে দেশে ফিরে আসতে হবে।

অতএব, বর্তমানে ওপিটি পিরিয়ডে থাকা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন, যারা উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

 

news