সুদানের উত্তর করদোফান প্রদেশে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর চালানো এক ড্রোন হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই হামলা সুদানের চলমান সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার এক নতুন মাত্রা যোগ করল। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) টিআরটি ওয়ার্ল্ড-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত সোমবার (৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় ভোরে আল-ওবেইদ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় আল-লুয়াইব গ্রামে এই হামলা চালানো হয়। একজন স্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড্রোন থেকে ছোড়া বোমাগুলো সরাসরি বেসামরিক নাগরিকদের একটি জমায়েতে পড়ে, যেখানে একটি জানাজা বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান চলছিল। যদিও আরএসএফ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে সরকারি কর্মকর্তারা এই হামলার জন্য আরএসএফ-কেই দায়ী করেছেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার তাঁবুতে হামলা, মানবতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট লঙ্ঘন
প্রাদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত একটি বড় তাঁবুকে লক্ষ্য করে এই হামলাটি চালানো হয়। সেখানে উপস্থিত শতাধিক মানুষের মধ্যে বহু নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ ছিলেন। হামলার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে ঘটনাস্থলেই অন্তত ৪০ জন মানুষ প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি উত্তর করদোফানে বেসামরিক জনগণের ওপর র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের চালানো নতুনতম অপরাধ, যা মানবতার বিরুদ্ধে এক সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।” সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আরএসএফ-কে অবিলম্বে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, এই বাহিনী নিয়মিতভাবে নিরস্ত্র বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

 হুমকির বাস্তবায়ন? পালাচ্ছে ৩৮ হাজার মানুষ!
অন্যদিকে, আরএসএফ সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল যে, তারা শিগগিরই আল-ওবেইদ শহরে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাবে। তারা স্থানীয়দের নিরাপদ করিডোর ব্যবহার করে শহর ছেড়ে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিল। এই ঘোষণার ঠিক পরই সোমবারের এই হামলা ঘটল, যা এখন অনেকের কাছেই সেই হুমকির বাস্তব রূপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, অক্টোবরের শেষ দিক থেকে উত্তর ও দক্ষিণ করদোফানে নিরাপত্তাহীনতার কারণে অন্তত ৩৮ হাজার মানুষ নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। যুদ্ধের কারণে এই অঞ্চলে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবার মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে।

চলমান সংঘাতে আরএসএফ সম্প্রতি উত্তর করদোফানের বারা শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে বেসামরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে। এর আগে, গত ২৬ অক্টোবর আরএসএফ উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী আল-ফাশের শহর দখল করে, যেখানে বেসামরিকদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ উঠেছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সেই সময় সতর্ক করেছিল—এই সংঘাত সুদানের ভৌগোলিক বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলতে পারে।

 

news