চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ জিনজিয়াং এখন দেশটির নতুন পর্যটন হটস্পট। পাহাড়, হ্রদ আর মরুভূমির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে ২০২৪ সালেই সেখানে ঘুরতে গেছেন প্রায় ৩০ কোটি পর্যটক। দেশি-বিদেশি ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে জিনজিয়াং যেন এখন ‘চীনের লুকানো স্বর্গ’।
তবে এই সৌন্দর্যের পর্দার আড়ালে আছে এক বেদনাময় ইতিহাস—যেখানে আনন্দের হাসির নিচে লুকিয়ে আছে হাজারো কান্না।
এক দশক আগের জিনজিয়াং: শান্তির নয়, দমন-পীড়নের গল্প
আজ যেখানে সেলফি তুলছে পর্যটকরা, এক দশক আগেও সেই জিনজিয়াং ছিল চীনের সবচেয়ে অশান্ত অঞ্চলগুলোর একটি। এখানকার প্রধান জাতিগোষ্ঠী তুর্কি ভাষাভাষী মুসলিম উইঘুররা দীর্ঘদিন ধরে চীনা সরকারের কঠোর দমননীতির শিকার—এমন অভিযোগ বহুবার উঠেছে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দাবি, চীন এক মিলিয়নেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে তথাকথিত পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রেখেছে। সেসব শিবিরে নির্যাতন, বাধ্যতামূলক শ্রম এবং সাংস্কৃতিক নিপীড়নের অভিযোগও রয়েছে।
বিলিয়ন ডলারের সাজে নতুন জিনজিয়াং
কিন্তু এখন চীন সেই অন্ধকার অতীতকে ঢেকে দিচ্ছে ঝলমলে পর্যটন সাজে। বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে সেখানে গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন, আধুনিক অবকাঠামো ও বিলাসবহুল রিসোর্ট।
চীনা কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৪০০ মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ এবং এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান আয় করা। সামাজিক মাধ্যমে ও টিভি নাটকে জিনজিয়াংকে তুলে ধরা হচ্ছে “চীনের গোপন স্বর্গ” হিসেবে।
রঙিন পোশাক, ঐতিহ্যবাহী নাচ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিডিও ঘুরছে ইন্টারনেটে—কিন্তু বাস্তবতার এক বড় অংশ সেখানে অনুপস্থিত।
“আমাদের সংস্কৃতি বিক্রি করা হচ্ছে পর্যটনের সাজে”
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত উইঘুর অধিকারকর্মী ইরাদে কাশগারি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই নতুন জিনজিয়াং ইমেজ নিয়ে। তিনি বলেন,
“সরকার এখন আমাদের সংস্কৃতিকে পর্যটনের সাজে বিক্রি করছে। তারা দেখাচ্ছে, আমরা শুধু রঙিন পোশাকে নাচি, কিন্তু আমাদের আসল ইতিহাসের কোনো মূল্য নেই।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি আমার জন্মভূমিতে ফিরতে পারি না, অথচ লাখো পর্যটক সেখানে নির্ভয়ে ঘুরছে। এটাই জিনজিয়াংয়ের প্রকৃত ট্র্যাজেডি।”
আনন্দের আড়ালে অন্য এক গল্প
চীন আজ জিনজিয়াংকে সাজিয়ে তুলছে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে। কিন্তু অনেকের মতে, এই চকচকে ছবির আড়ালে লুকিয়ে আছে উইঘুরদের হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর, স্মৃতি ও পরিচয়।
পর্যটন বাড়ছে, হাসির ছবি ছড়াচ্ছে, কিন্তু ইতিহাসের ব্যথা—আজও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই জিনজিয়াংয়ের মরুভূমির মতোই নিঃশব্দে।
                                
                                
	
                                
                    
                                                                                    