২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতা। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) থেকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় রাজ্যে শুরু হয়েছে ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (SIR) কার্যক্রম — আর এই নিয়েই তুমুল বিতর্ক।

দিনের শুরুতেই এসআইআর-এর বিরোধিতা করে রাজপথে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল মিছিল বের হয়, যাতে ছিলেন দলের হেভিওয়েট নেতা-নেত্রী, সাংসদ, মন্ত্রী, তারকা শিল্পীসহ হাজারো কর্মী-সমর্থক।

রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত মমতার পদযাত্রা

এই মিছিল শুরু হয়েছিল কলকাতার রেড রোডে সংবিধান প্রণেতা ড. বি. আর. আম্বেদকরের ভাস্কর্য থেকে। সেখান থেকে ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন এভিনিউ হয়ে মিছিল শেষ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে।

মিছিলের শুরুতে আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ৪ কিলোমিটার হাঁটেন সংবিধান হাতে নিয়ে। শেষে তিনি ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআর আতঙ্কে মৃতদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

“মানবজীবন অনেক দামী, বিজেপির চক্রান্তে প্রাণ দেবেন না” — মমতা

জোড়াসাঁকোতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,

“যারা মারা গেছেন, সেটা খুবই দুঃখজনক। আপনারা বিজেপির চক্রান্তে মূল্যবান প্রাণ নষ্ট করবেন না। একটা মানবজীবন অনেক কষ্টে তৈরি হয়।”

ভোটারদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেন,

“আপনাদের যদি কোনো কাগজ না থাকে, আমাদের শিবিরে আসুন। আমরা সব করে দেব। চিন্তার কিছু নেই, আমরা পাশে আছি। আমরা চাই, প্রত্যেকের নাম ভোটার তালিকায় থাকুক।”

মতুয়াদের উদ্দেশে দিদির বার্তা: ‘ভয় পাবেন না, দিদি আছেন’

মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মমতা বলেন,

“বাংলায় কাউকে গায়ে হাত দিতে দেব না। ভয় পাবেন না, আপনাদের দিদি আছে।”

SIR প্রক্রিয়ার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী

মমতার অভিযোগ,

“এটা করতে অন্তত তিন বছর লাগে। নির্বাচনের আগে তিন মাস বাকি, এখন এটা কীভাবে সম্ভব? আসলে প্রতিটি ভোটের আগেই ওরা কিছু না কিছু নাটক করে। একবার নোট বাতিল, এবার ভোটার বাতিল!”

তিনি আরও বলেন,

“যদি একটা ভোটারও ভুয়া হয়, তাহলে আপনাদের সরকারও ভুয়া। এই সরকার নির্লজ্জ, এদের লজ্জা হওয়া উচিত।”

“বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি নয়” — বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ

বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন,

“বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয় না, যেমন উর্দু বললেই সবাই পাকিস্তানি হয় না। ভারতের পাঞ্জাব ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব আলাদা — তাই ভাষা দিয়ে পরিচয় বিচার করা অজ্ঞতা।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন,

“কেন্দ্র দুই কোটি মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইছে, ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে চায়। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। একজন ভোটার বাদ গেলেও আমরা বিজেপি সরকার ভেঙে দেব।”

অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘পরিবর্তন মিছিল’

একই দিনে বিরোধী দল বিজেপিও রাজপথে নামে। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘পরিবর্তন মিছিল’ শুরু হয় পানিহাটি ট্রাফিক মোড় থেকে, শেষ হয় আগরতলার তেতুলতলা মোড়ে।
মিছিলে ছিলেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা অর্জুন সিংসহ বহু কর্মী-সমর্থক।

 

news