তানজানিয়ায় নির্বাচনী বিক্ষোভের পর ব্যাপক দমন অভিযান শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক আইনজীবী ও বিচার বিভাগীয় সূত্র। খবর দিয়েছে এএফপি।
শনিবার দেশটির প্রধান বিরোধী দল চাদেমা জানিয়েছে, তাদের আরেকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
৯৮ শতাংশ ভোটে জয়ের পরই সহিংসতা
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান ২৯ অক্টোবরের নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তবে বিরোধী দল, যাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তারা এ ভোটকে সরাসরি ‘প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
নির্বাচনের দিন দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এই সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত হতে পারে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সঠিক তথ্য যাচাইও সম্ভব হয়নি।
২৫০ জন আদালতে, অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহ
শুক্রবার তানজানিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্র দারুস সালামে শত শত মানুষকে আদালতে হাজির করা হয়।
আইনজীবী পিটার কিবাতালা জানান, ২৫০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি মামলায় অভিযোগ—‘রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্র’ ও ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’।
আদালতের সূত্র বলছে, কমপক্ষে ২৪০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিরোধী দলের অভিযোগ: হত্যা ও দমননীতি
বিরোধী দল চাদেমার দাবি, নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ৮০০ জন নিহত হয়েছেন।
কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সূত্রও এই অনুমানকে সমর্থন করেছে। এমনকি কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সরকার এখনো নিহত বা আহতদের কোনো সরকারি সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
শনিবার দলটি জানায়, তাদের উপ-মহাসচিব আমানি গোলুগওয়াকে আরুশা শহরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এক্স এ দেওয়া এক বিবৃতিতে দলটি বলে,
“ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলের গ্রেফতার মানে দলের ছয় শীর্ষ নেতার মধ্যে এখন কেবল তিনজন মুক্ত আছেন।”
‘নেতৃত্ব পঙ্গু করতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা’
দলটির নেতা টুন্ডু লিসু এপ্রিল থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান জন হেচে অক্টোবরে গ্রেফতার হন এবং পরে সন্ত্রাসবাদমূলক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হন।
চাদেমা বলেছে,
“সরকার আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে দলকে নেতৃত্বহীন করে দিতে চায়।”
পুলিশের হুঁশিয়ারি
পুলিশ জানিয়েছে, তারা সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দলের মহাসচিব জন মানিকা, ডেপুটি আমানি গোলুগওয়া, এবং মুখপাত্র ব্রেন্ডা রূপিয়াকে খুঁজছে।
পুলিশ মুখপাত্র ডেভিড মিসাইম এক বিবৃতিতে বলেছেন,
“আমরা তাদের অবিলম্বে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তানজানিয়ার এই দমননীতিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আফ্রিকার এই দেশটি এখন ভয় ও অনিশ্চয়তার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।
