পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে প্রচণ্ড হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পাস হলো সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিল। বুধবার (১২ নভেম্বর) বিলটি পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট নওয়াজ শরিফ এবং পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো সহ ক্ষমতাসীন জোটের শীর্ষ নেতারা পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিলটির প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন বিরোধী দলগুলো।

বিলে কী আছে? সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত ও সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি
জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার বিলটি ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করেন। এই বিলটিতে সংবিধানের মোট আটটি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলো হলো:

সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি: সেনাপ্রধান সামরিক বাহিনীর প্রধানের নতুন পদে উন্নীত হবেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী তার অধীনে থাকবে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তার পদমর্যাদা বজায় থাকবে।

বিচার বিভাগের সংস্কার: সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সাংবিধানিক মামলার স্থানান্তর: সাংবিধানিক মামলাগুলো সুপ্রিম কোর্ট থেকে নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতে স্থানান্তরিত হবে, যার বিচারপতি নিয়োগ করবে সরকার।

ভোটের ফল ২৩৪ বনাম ৪! বিরোধীরা ছিঁড়ল বিলের কপি
ভোটাভুটিতে বিলটির পক্ষে ভোট দেন ২৩৪ জন আইনপ্রণেতা, আর বিপক্ষে পড়ে মাত্র চারটি ভোট। ভোটাভুটির সময় প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) বিলটির বিরোধিতা করে ওয়াকআউট করে এবং তাদের আইনপ্রণেতারা ভোটাভুটিতে অংশ নেননি।

পিটিআই ছাড়াও আরও কয়েকটি বিরোধী দল বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলে। বিরোধীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দেশের গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। মজার বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইউআই-এফ)-এর চার সদস্য সংশোধনীর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

সমালোচনার ঝড়: 'ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা'
এই সংশোধনীতে সামরিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, যেমন উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন। বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের নতুন পদে উন্নীত হবেন। সমালোচকরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন জোটের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপ্রিম কোর্ট বেশ কয়েকটি সরকারি নীতি আটকে দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তাই সমালোচকরা মনে করছেন, সাংবিধানিক মামলাগুলো সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে কার্যত বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলো।

জাতীয় পরিষদে বিলটি পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আইনপ্রণেতাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিলটি এখন আবারও বিতর্ক ও পর্যালোচনার জন্য সিনেটে ফেরত পাঠানো হবে এবং সেখানে পাস হলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে এটি আইনে পরিণত হবে।

 

news