তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আঙ্কারার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন, রাশিয়ার এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওয়াশিংটন এইসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তুরস্কের ওপর।
ফিদান 'তুর্কি খবর' নামক টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প এরদোগানের সঙ্গে এক সাক্ষাতে বলেছেন যে সিএএটিএসএবা কাটসা আইনের আওতায় তুরস্কের ওপর কোনো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয় এবং তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ট্রাম্পের সরকার ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এই সমস্যাটি সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা সমস্যার শিগগিরই সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
২০১৭ সালে তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা-সিস্টেম কেনার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং এরই আলোকে ২০১৯ সালের গ্রীষ্মকাল ও শরতে ওই সিস্টেমের প্রথম চালান গ্রহণ করে।
সিরিয়ায় মার্কিন সরকার ও ইসরায়েলের পছন্দনীয় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার কারণে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভুয়সি প্রশংসা করেছেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেছিলেন, 'এরদোগান সিরিয়ার সমস্যা সমাধান করেছেন। এটি তুরস্কের জন্য একটি বড় জয় এবং আমি চাই তাকে এই কৃতিত্ব দেওয়া হোক'। সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টায় এরদোগানের অবদানকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
ইসরায়েলের সঙ্গে আপোস-রফার ঘোর বিরোধী ও ইরান-পন্থী আসাদ যতদিন সিরিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন ততদিন ইসরায়েল বেশ অস্বস্তিতে ছিল। কিন্তু আসাদের পতনের পর সিরিয়াকে এখন আর ইসরায়েলের জন্য কোনো বড় প্রতিপক্ষ বা বাধা বলে মনে করছে না ইসরায়েল। ইসরায়েল এরিমধ্যে সিরিয়ার বেশ কিছু এলাকা দখল করে নিয়েছে এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমির ওপর দখলদারিত্ব আর পাকাপোক্ত বা জোরদার করার স্বপ্ন দেখছে। সিরিয়ার সাবেক গেরিলা নেতা থেকে প্রেসিডেন্টের পদে আসীন জোলানি বার বার বলেছেন যে তার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে আপোস করতে চায়। সিরিয়ার পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল ও মার্কিন সরকার লেবাননের ওপরও ইরানের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ নির্মূলের চেষ্টা করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নানা সামরিক স্থাপনা ও অবস্থানে প্রায় এক হাজার বার বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল এবং সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বলতে কার্যত এখন আর কিছু নেই বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও দাবি করেছিলেন যে আসাদের পতনে ইসরায়েলেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইসরায়েল আসাদ-সরকারের ওপর তুরস্ক ও পশ্চিমাদের লেলিয়ে দেয়া গেরিলা বাহিনী আলকায়দাপন্থী আইএস বা দায়েশ ও এইচটিএস বা সাবেক জেবহাতুন নুসরার গেরিলাদের চিকিৎসা-সেবাসহ নানা ধরনের সেবা দিয়েছে বলে নানা তথ্য ও খবর প্রকাশ হয়েছিল।
