তিনি ভেবেছিলেন, কাগজটা ফেলে দেবেন। কিন্তু সেটা করেননি—আর সেখান থেকেই শুরু হয় ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্তের এক ভয়ংকর অধ্যায়। সেই ভুল এক তরুণী কারারক্ষীকে টেনে নেয় এক দণ্ডিত যৌন অপরাধীর সঙ্গে নিষিদ্ধ সম্পর্কে, আর শেষ পর্যন্ত তাকেও পরিণত করে একজন দণ্ডিত অপরাধীতে।
শেরি-অ্যান অস্টিন-স্যাডিংটন বলেন, এটা এমন এক সিদ্ধান্ত, যার জন্য তিনি সারাজীবন অনুতপ্ত থাকবেন। তার গল্প তুলে ধরে ব্রিটেনের কারা ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতা—কর্মীদের নিয়োগ থেকে শুরু করে তদারকি পর্যন্ত বড়সড় ফাঁকফোকর কোথায় কোথায় আছে।

২০২২ সালের গ্রীষ্ম। ডরসেটের এইচএমপি দ্য ভার্ন কারাগারের ডে-রুমে দাঁড়িয়ে ছিলেন ২৬ বছর বয়সী কারা কর্মকর্তা শেরি-অ্যান। হঠাৎই বন্দি ব্র্যাডলি ট্রেঙ্গ্রোভ তাকে একটি ম্যাগাজিন দেয়—ভিতরে লুকানো ছিল তার অবৈধ মোবাইল নম্বর।

“আমি ভাবছিলাম, রিপোর্ট করব? নাকি করব না? কখনোই ভাবিনি যে তাকে মেসেজ করব।”
কিন্তু তিনি নম্বরটি রেখে দেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় সব।


২০১৯ থেকে ২০২৪—এই পাঁচ বছরে কমপক্ষে ৬৪ জন কারা কর্মকর্তা বন্দিদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় বরখাস্তের সুপারিশ পেয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি—কারণ অনেকে ধরা পড়ার আগেই পদত্যাগ করেন।

এই সংকট সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে নারী কারারক্ষীদের মধ্যে। গত এক বছরে কমপক্ষে ১০ জন নারী এমন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন—কেউ ভিডিও ভাইরাল, কেউ কাপবোর্ডে আটক অবস্থায় ধরা, কেউ আবার উচ্চপ্রোফাইল বন্দির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে দীর্ঘ সাজা পেয়েছেন।

শেরি-অ্যানের গল্প অন্যদের চেয়ে আলাদা। তিনি জানতেন ট্রেঙ্গ্রোভ একজন দণ্ডিত যৌন অপরাধী। ২০২৩ সালের মে মাসে শেরি-অ্যান গ্রেপ্তার হন—কারণ তিনি বন্দির কাছে ক্যালপল সিরিঞ্জ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, যাতে ট্রেঙ্গ্রোভ তার শুক্রাণু দিয়ে তাকে কৃত্রিমভাবে গর্ভধারণ করাতে পারে।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্পর্ক শেষ হওয়ার নয় মাস পরে শেরি-অ্যান হঠাৎ স্পাইনাল স্ট্রোকে প্যারালাইজড হন। বুকের নিচ থেকে চলাফেরায় অক্ষম হয়ে পড়েন। এজন্য তার দুই বছরের সাজা স্থগিত হয়।

“হ্যাঁ, আমি জেলে যাইনি। কিন্তু আমি সারাজীবনের জন্য এই শরীরেই বন্দি হয়ে গেছি।”

অসহায় জীবনের গল্পও আছে তার। ১৬ বছরেই মা হন। চাকরি, প্রশিক্ষণ, ব্যক্তিগত জীবন—সব মিলিয়ে মানসিক টানাপোড়েন ছিল সবসময়।

২০১৯ সালে তিনি কারা কর্মকর্তা হন। দ্য ভার্ন কারাগার মূলত যৌন অপরাধীদের জন্য। ট্রেঙ্গ্রোভ ধীরে ধীরে তাকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করে—একদিন ম্যাগাজিন, একদিন সামান্য প্রশংসা, এরপর ব্যক্তিগত বার্তা, মিথ্যে গল্প, আবেগী নাটক—সব মিলিয়ে শেরি-অ্যানকে কাবু করে ফেলে।
“মনে হচ্ছিল আমি যেন নতুন একটি পরিবার পেয়ে গেছি।”

যাকে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, তিনি ছিলেন ভয়ংকর অপরাধী—এক কিশোরীকে বহুবার ধর্ষণের দায়ে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত।
আমি ভাবতাম আমি যথেষ্ট নই। তাই যে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছে, তাকে সব কিছু দিয়ে দিতে হবে।”
সম্পর্ক শুরু হয়, কয়েকবার যৌন সম্পর্কও হয়—এমনকি শেরি-অ্যান গর্ভবতী হন, পরে গর্ভপাত হয়।
বার্তালাপ ধরা পড়লে ট্রেঙ্গ্রোভকে অন্য কারাগারে পাঠানো হয়। শেরি-অ্যান চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু সম্পর্ক শেষ হয়নি। ট্রেঙ্গ্রোভ তাকে নাম বদলাতে বাধ্য করে, যাতে নতুন কারাগারে দেখা করতে পারে।


পুলিশ যখন তাকে ট্রেঙ্গ্রোভের প্রকৃত অপরাধ দেখায়, তখনই সম্পর্ক ভেঙে পড়ে।
২০২৪ সালে ট্রেঙ্গ্রোভ তাকে রক্তমাখা ১০ পাতার চিঠি পাঠায়—
“তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।”

কারা ব্যবস্থার ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা—তরুণী রক্ষীরা ঝুঁকিতে

কারা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে। খুব অল্প প্রশিক্ষণে তরুণী নারীদের বিপজ্জনক পুরুষ বন্দিদের সঙ্গেই দায়িত্ব দেয়া হয়। তদারকি নেই, নজরদারি নেই—সব মিলিয়ে কর্মীরাই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছেন।

“অনেকে কাজ না পেয়ে এই চাকরিতে আসেন। এত কম স্টাফে কাজ চালানো হয় যে কারারক্ষীদের দিকেও ঠিকভাবে নজর দেওয়া হয় না।”

 

news