দিল্লির লাল কেল্লার কাছে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় এবার নাটকীয় মোড় নিল।দাবি করল, এই হামলায় 'আত্মঘাতী হামলাকারী' ছিলেন একজন চিকিৎসক – ডা. উমর উন নবী। আর এই ষড়যন্ত্রে তার সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন পুলওয়ামার এক প্লাম্বার, আমির রশিদ আলি। কিন্তু এই দুই সন্দেহভাজনের পরিবার এখন উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প নিয়ে।

উমরের বাড়ি শ্রীনগর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের পুলওয়ামা জেলার কোইল গ্রামে। বিস্ফোরণের ঘটনার পরই নিরাপত্তা বাহিনী রাতের অন্ধকারে উমরের সেই বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দেয়। এখন সেখানে পড়ে আছে শুধু ইট-পাথরের ধ্বংসস্তূপ।

উমরের ভাইয়ের স্ত্রী মুজাম্মিল আখতার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, দেড় বছর আগে উমর কাশ্মীর ছেড়ে ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বলেছেন, "মাস দুয়েক আগে উমর শেষবার বাড়ি এসেছিল। গত শুক্রবারও আমি তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি, তার বাড়ি আসারই কথা ছিল। এখন আমরা তার সম্পর্কে এইসব কথা শুনছি।"

পরিবারের দাবি, উমর একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন যিনি শ্রীনগরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ (জিএমসি) থেকে এমবিবিএস এবং এমডি পাশ করেছেন। তার এক আত্মীয় তাবাস্সুম আরা বলেন, "উমরের মা সংসারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন।" আরও মর্মান্তিক তথ্য হলো, কিছুদিন আগেই উমরের বাগদান হয়েছিল।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি আমির রশিদ আলি। পুলওয়ামার সাম্বুরা গ্রামের বাসিন্দা এই ৩০ বছর বয়সী যুবক পেশায় একজন প্লাম্বার বা মিস্ত্রি।

তার ভাইয়ের স্ত্রী কুলসুম জান জানান, গত ১০ই নভেম্বর গভীর রাতে পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে আমির এবং তার বড় ভাই উমর রশিদকে তুলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, "পুলিশ বলেছিল শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। পরের দিন উমরকে ফিরিয়ে দিলেও, আমিরকে আর ফেরত দেওয়া হয়নি।" কুলসুম দাবি করেন, তার স্বামী উমর রশিদ কখনো দিল্লি পর্যন্ত যাননি।

আমিরের মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "আমি ঈশ্বরের কসম খেয়ে বলছি, আমার ছেলে সম্পর্কে আমরা কোনো কিছুই জানি না। সে তো একজন সাধারণ প্লাম্বার ছিল। এবার ধান কাটার জন্যও আমরা কাউকে পাইনি, আমির একাই সব ফসল কেটেছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "যখন এখানে পাথর ছোঁড়াছুড়ি হত, তখন অনেককে ধরা হয়েছিল, কিন্তু আমার এই দুই ছেলের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা হয়নি।"

এনআইএ-র দাবি একেবারে ভিন্ন। তাদের বক্তব্য, আমির রশিদ আলিই আত্মঘাতী হামলাকারী ডা. উমর উন নবীর প্রধান সহযোগী ছিলেন। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি আমিরের নামেই রেজিস্ট্রি করা ছিল বলে তারা অভিযোগ করেছে। এনআইএ আরও দাবি করেছে, আমির ডা. উমরের সঙ্গে মিলে এই সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

এই মামলায় এনআইএ ইতিমধ্যেই তৃতীয় একজনকে গ্রেফতার করেছে – জসির বিলাল ওয়ানি ওরফে দানিশ। অভিযোগ, সে ড্রোন ও রকেট বানানোর টেকনিক্যাল সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে আরও মর্মান্তিক খবর হলো, দানিশের বাবা বিলাল আহমেদ ওয়ানি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর হাসপাতালে মারা গেছেন।

বিলালের বৌদি নাসিমা আখতার বলেন, "আমার বোনজামাই বিলাল আহমেদ আত্মহত্যা করেছেন, কারণ তার অসম্মান হচ্ছিল। আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা কী করে জানব কে কেমন?"

কাশ্মীরের চিকিৎসকদের ওপর নজরদারি
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ইতিমধ্যেই এই মামলায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ডা. মুজাম্মিল শাকিল এবং ডা. আদিল। তদন্তকারী সংস্থাগুলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাশ্মীরের একাধিক চিকিৎসককে আটক করেছে, যদিও তাদের কয়েকজনকে পরে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, একজন শিক্ষিত ডাক্তার, একজন সাধারণ প্লাম্বার এবং তাদের পরিবারের করুণ গল্প – দিল্লি বিস্ফোরণ মামলা এখন রহস্যে ঘেরা। সরকারি তদন্তের দাবি আর সন্দেহভাজনদের পরিবারের কাহিনীর মধ্যে এখনো অনেক ফাঁকা জায়গা থেকে যাচ্ছে।

 

news