নাইজেরিয়ার নাইজার অঙ্গরাজ্যের ক্যাথলিক সেন্ট মেরিস স্কুল থেকে গত শুক্রবার অপহৃত হওয়া ৩১৫ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে ৫০ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে পালিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। তবে বাকি ২৬৫ জন শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষককে এখনও অপহরণকারীরা তাদের হেফাজতে রেখেছে। অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী একটি বৃহৎ অভিযান চালাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী ও চরমপন্থীদের হামলা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে নাইজেরিয়ায় এটি ছিল তৃতীয় বড় ধরনের অপহরণের ঘটনা।

এর আগে গত সোমবার ১৭ নভেম্বর কেব্বি অঙ্গরাজ্যের একটি মুসলিম বোর্ডিং স্কুল থেকে ২৫ স্কুলছাত্রী অপহৃত হয়।

এরপর বুধবার ১৯ নভেম্বর কওয়ারা অঙ্গরাজ্যের একটি গির্জা থেকে ৩৮ জন উপাসক অপহৃত হন।

সর্বশেষ শুক্রবার ২১ নভেম্বর সেন্ট মেরিস স্কুল থেকে এই ৩১৫ জনকে অপহরণ করা হয়।

গত সপ্তাহে কেব্বি অঙ্গরাজ্যের বোর্ডিং স্কুল থেকে ২৫ স্কুলছাত্রী অপহৃত হওয়ার ঘটনার পর নাইজেরিয়ার বেশ কয়েকটি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছিল। কেব্বি, নাইজার, কাটসিনা, ইয়োবে এবং কোয়ারা রাজ্যে অনেক স্কুল ও কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

নাইজার অঙ্গরাজ্য সরকার জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হুমকির কারণে বোর্ডিং স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট মেরিস স্কুল সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে স্কুল খোলা রেখেছিল। স্কুলটি অবশ্য এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

অপহরণের এই ধারাবাহিকতার প্রতিক্রিয়ায়, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু অতিরিক্ত ৩০ হাজার পুলিশ অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।

টিনুবু পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভিআইপি সুরক্ষা পরিষেবা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষ করে আক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সুরক্ষার প্রয়োজন এমন ভিআইপিরা এখন থেকে নাইজেরিয়ার সুরক্ষা ও নাগরিক প্রতিরক্ষা কর্পস  থেকে সশস্ত্র কর্মীদের জন্য অনুরোধ করতে পারবেন।

নাইজার অঙ্গরাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে, সশস্ত্র ব্যক্তিরা স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে সেন্ট মেরিস স্কুলে হামলা চালিয়ে সেখানে থাকা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অপহরণ করে।

নাইজার রাজ্যের গভর্নর মোহাম্মদ উমারু বোঙ্গোশনিবার এক ঘোষণায় বলেন, এলাকার সব স্কুল বন্ধ থাকবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এখন দোষ খোঁজার সময় নয়।”

সাহসী পলায়ন
স্থানীয় একটি খ্রিষ্টান সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার এই ৫০ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। এই ঘটনাটিকে অপহরণকারীদের হাত থেকে পালানোর একটি সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পরিবার এবং দেশটির জন্য এই পালিয়ে ফেরার খবর কিছুটা স্বস্তি এনেছে।

সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা অপহৃত বাকি স্কুল শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের জন্য বর্তমানে অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছে।

নাইজেরিয়ার বিভিন্ন অংশে স্থানীয়ভাবে 'ডাকাত' নামে পরিচিত অপরাধী চক্রের মাধ্যমে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ একটি বড় সমস্যা। এই গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই স্কুল, গ্রাম এবং অন্যান্য জনবহুল স্থান থেকে মানুষকে অপহরণ করে থাকে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলার জন্য নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন  সহ তাঁর বিদেশ ভ্রমণও স্থগিত করেছেন।

news