ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে চুক্তি চূড়ান্ত করতে এখন সরাসরি মস্কোয় পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত। হোয়াইট হাউজ ‘খুব আশাবাদী’ এই ঘোষণা দেয়ার পরেই, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার মস্কোয় ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সাথে সরাসরি বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।

এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফ্লোরিডায় ইউক্রেনীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দিনের দীর্ঘ আলোচনার পরে। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিতর্কিত ২৮ দফার শান্তি পরিকল্পনার খসড়ায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যেই ফ্লোরিডায় উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সাথে বসেন ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বললেও সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘কিছু কঠিন বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে’।

সোমবার হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট জানান, খসড়া শান্তি চুক্তিটি ‘অনেক পরিমার্জিত’ হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় প্রশাসন খুব আশাবাদী। তবে বিস্তারিত জানতে আমি আলোচকদের ওপরই ছাড় দেব। আমরা বেশ ভালো অনুভব করছি এবং আশা করছি যে এই যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে।”

গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে, তিনি মার্কিন প্রস্তাবিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনা দেখেছেন এবং এটিই যুদ্ধবিরতির জন্য ভবিষ্যতের চুক্তির ‘ভিত্তি’ হতে পারে।

তবে কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্ররা যখন এতে পরিবর্তনের কথা নিশ্চিত করে, তখন ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা মস্কো সেটা মেনে নেবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনায় ইউক্রেনের মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করে। তাদের মতে, পরিকল্পনাটি রাশিয়ার স্বার্থের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে। কারণ, এতে ইউরোপীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জব্দ থাকা কয়েক বিলিয়ন ডলারের রুশ সম্পদ কীভাবে বিনিয়োগ হবে তার নির্দেশনা ছাড়াও, ইউরোপের বাজারে ইউক্রেনের প্রবেশের শর্তও নির্ধারণ করা ছিল।

সোমবার প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জেলেনস্কির সাথে বৈঠকের পর বলেন, ‘এখনো কোন শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের কোন প্রস্তাব শুধুমাত্র ইউক্রেন ও ইউরোপের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হতে পারে।

ম্যাখোঁ বলেন, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের ভূমি ছাড়ের প্রশ্নটি ‘শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিই চূড়ান্ত করতে পারেন’। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, “জব্দকৃত রুশ সম্পদ, নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়গুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোকেও জড়িত করা প্রয়োজন।”

ফরাসি নেতা ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই দীর্ঘ সংঘাত শেষ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন। ২০২২ সাল থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় হামলা চালাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, “এই সপ্তাহটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হতে পারে, কিন্তু মস্কো শুধুমাত্র ‘তাদের সাথেই আলোচনা করতে চায় যারা রাশিয়ার কাছে ইতিমধ্যে যা আছে, তার চেয়ে বেশি কিছু দিতে প্রস্তুত।”

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “আমার ভয় হচ্ছে যে, সব চাপই দুর্বল পক্ষের ওপর পড়বে। কারণ ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করলেই এই যুদ্ধ থামানো সবচেয়ে সহজ হবে।”

ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে আগ্রহী, যেমন ন্যাটো সদস্যপদ— যা দেশটিকে ভবিষ্যৎ হামলা থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু রাশিয়া এটির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে এবং ট্রাম্পও ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দিতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার মস্কোর এই আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন রাশিয়ান কর্মকর্তারা পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি করেছেন। ক্রেমলিন পূর্ব ইউক্রেনের ভোভচানস্ক শহর দখলের কথাও বলেছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ক্রেমলিনের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেননি। যুদ্ধের সম্মুখভাগ পর্যবেক্ষণকারী ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা প্রকল্পগুলোর মতে, ভোভচানস্ক বা পোকরোভস্ক এখনও রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

 

news