দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধ, মৃত্যু আর ধ্বংসের বিভীষিকার মধ্যেও গাজার মানুষ এক ঝলক আশা আর আনন্দের দেখা পেয়েছে। মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, যুদ্ধবিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডে একই মঞ্চে ৫৪ নবদম্পতির গণবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

এই অসাধারণ উদ্যোগের আয়োজন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মানবিক সংগঠন ‘আল ফারেস আল শাহিম’।

ফিলিস্তিনি সমাজে বিয়ে শুধু একটি পারিবারিক বন্ধনই নয়, এটি একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মহাউৎসব। কিন্তু দীর্ঘদিনের সংঘাত গাজার প্রতিটি সাধারণ জীবনকে থমকে দিয়েছে। বিয়ের আয়োজনও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তি এলেও আগের মতো বড় আকারে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করা এখন সম্ভব নয়।

তবুও, ধ্বংসের চিহ্ন ছড়িয়ে থাকা এলাকার মাঝেই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দাঁড়িয়েছিলেন নববধূ ইমান হাসান লাওয়া এবং স্যুট পরা হিকমাত লাওয়াসহ অন্যান্য দম্পতিরা।

২৭ বছর বয়সী হিকমাত লাওয়া বলেন, “এত ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা আমাদের নতুন পথচলা শুরু করছি। আল্লাহ চাইলে এই যুদ্ধ এখানেই থেমে যাবে।”

চারপাশে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ছিল, মানুষ নবদম্পতিদের অভিনন্দন জানাচ্ছিল। কিন্তু গাজার তীব্র মানবিক সংকট আনন্দের এই মুহূর্তকেও পুরোপুরি উজ্জ্বল হতে দিচ্ছে না। প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অনিশ্চিত ও ভয়াবহ জীবনযাপন করছে।

গাজার অধিকাংশ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, খাদ্য ও পানির সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর আশ্রয়ের অভাবে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও হিকমাতের কণ্ঠে ছিল স্বপ্নের আকুতি: “সবার মতো আমরাও সুখী হতে চাই। আগে আমি ভাবতাম—একটা বাড়ি, একটা চাকরি, একটা স্বাভাবিক জীবন। এখন আমার স্বপ্ন শুধু একটি নিরাপদ তাঁবু।”

নববধূ ইমানের চোখে ছিল অশ্রু, তিনি বলেন, “এত শোক আর ক্ষতির মাঝে আনন্দ অনুভব করা খুব কঠিন। তবুও আমি বিশ্বাস করি, একদিন আমরা আবার নতুন করে সবকিছু গড়ে তুলতে পারব।”

 

news