আল জাজিরার গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, একসঙ্গে একাধিক সামরিক ফ্রন্ট খোলা সত্ত্বেও ইহুদিবাদী ইসরায়েল টেকসই সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, ইরানকে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে দুর্বল করার মূল লক্ষ্যও পূরণ করতে পারেনি তেল আবিব। বরং আগের চেয়ে আরও বেশি রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পথে রয়েছে দেশটি।

পার্সটুডের বরাতে জানা গেছে, আল জাজিরা গবেষণা কেন্দ্র ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর শুরু হওয়া যুদ্ধগুলোর পরিণতি বিশ্লেষণ করে এ মূল্যায়ন তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম’-এর পর ইসরায়েল গাজা থেকে শুরু করে লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া এমনকি ইরান পর্যন্ত যুদ্ধের পরিধি বাড়ায়। লক্ষ্য ছিল আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে নেওয়া, যাকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

তবে আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব অভিযানে ইসরায়েলের অর্জন সীমিত ছিল। শত্রুপক্ষকে সাময়িকভাবে দুর্বল করা গেলেও, দীর্ঘমেয়াদি বা টেকসই কৌশলগত সুবিধা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজা যুদ্ধ ইসরায়েলের প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এতে দেশটির বড় ধরনের নিরাপত্তা দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পরও ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করতে পারেনি বা গাজা উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়নি। উল্টো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তিই পুরো সমীকরণের প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে টিকে রয়েছে।

অন্য যুদ্ধ ফ্রন্টগুলোর প্রসঙ্গ টেনে আল জাজিরা লিখেছে, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়লেও তারা পুনর্গঠন করতে পেরেছে। পাশাপাশি নিজেদের সামাজিক ভিত্তি ও আঞ্চলিক ভূমিকা বজায় রাখার সক্ষমতাও ধরে রেখেছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, সর্বোচ্চ সামরিক চাপ প্রয়োগ করেও ইসরায়েল প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে নিজের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

প্রতিবেদনের এক অংশে বলা হয়েছে, ইরানকে আঘাত করার লক্ষ্যেই ইসরায়েল এই যুদ্ধ কৌশল গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হামলার পরও ইরান তার কৌশলগত জ্ঞান, মূল সামরিক সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

আল জাজিরার মতে, এই সংঘাতে ইরানের কিছু দুর্বলতা প্রকাশ পেলেও আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য থেকে দেশটি ছিটকে পড়েনি।

উপসংহারে আল জাজিরা জানায়, এসব যুদ্ধের চূড়ান্ত ফল হলো—ইসরায়েল আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া কার্যত থমকে গেছে এবং এখনো কোনো নতুন স্থিতিশীল আঞ্চলিক শৃঙ্খলাবস্থা গড়ে ওঠেনি।

 

news