মিয়ানমারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ভয়াবহ এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ সরাসরি অভিযোগ করেছে, দেশটির সামরিক জান্তা সাধারণ মানুষকে হুমকি-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ভোট দিতে বাধ্য করছে। একইসাথে, এই ভোট ঠেকাতে সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর হামলার কথাও উল্লেখ করেছে বিশ্ব সংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, "মানুষকে জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করা এবং ভিন্নমত প্রকাশের কারণে গ্রেপ্তারের এই নজিরবিহীন প্রথা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।"
আগামী রবিবার থেকে মিয়ানমারে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। সামরিক সরকার এই নির্বাচনকে দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর একটি ধাপ বলে দাবি করলেও, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, বাস্তবে এটি জান্তা সরকারের ক্ষমতাকে কৌশলগতভাবে বৈধতা দেওয়ারই একটি প্রহসনমূলক চেষ্টা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই গোটা দেশ এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়। দেশটির সাবেক নেত্রী অং সান সু চি এখনও কারাগারে আটক রয়েছেন এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) কার্যত ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার, দীর্ঘ কারাদণ্ড ও হুমকি
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন সুরক্ষা আইন’-এর অপব্যবহার করে মতপ্রকাশের অপরাধে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে দেওয়া হচ্ছে অমানবিকভাবে দীর্ঘ কারাদণ্ড। ইয়াঙ্গুনে নির্বাচনবিরোধী পোস্টার টাঙানোর অভিযোগে তিন তরুণকে ৪২ থেকে ৪৯ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে।
আরও ভয়াবহ অভিযোগ হলো, বাস্তুচ্যুত মানুষদের সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে, তারা যদি ভোট দিতে না আসে, তাহলে তাদের ঘরবাড়ি দখল করে নেওয়া হবে অথবা সরাসরি হামলা চালানো হবে। জাতিসংঘের মতে, "মানুষকে জোর করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ফিরে যেতে বাধ্য করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।"
বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর হামলা
অন্যদিকে, সামরিক জান্তার বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। তারা মানুষকে ভোটে অংশ না নিতে বলছে এবং নির্বাচনী কার্যক্রম বানচাল করতে সক্রিয়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি এলাকায় নির্বাচনী অফিসে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে একাধিক নির্বাচনকর্মী আহত হয়েছেন।
এভাবেই ভোটের নামে একদিকে জান্তার জবরদস্তি, অন্যদিকে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর হামলা—দুই পাশের চাপের মাঝে পড়ে সাধারণ মিয়ানমারবাসীর নিরাপত্তা ও অধিকার মারাত্মক হুমকির মুখে।
