আফগানিস্তানে অব্যাহত নিরাপত্তাহীনতা ও সংকট উত্তরণে তালেবানের ব্যর্থতার নানা কারণ

 

আফগানিস্তানে নিরাপত্তাহীনতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) হেরাতের জামে মসজিদে আত্মঘাতী হামলাকারীর বোমা বিস্ফোরণের এক ঘটনায় ওই মসজিদের খতিব, বিশিষ্ট তালেবান নেতা মৌলভি মুজিবুর রহমান আনসারিসহ বহু মানুষ প্রাণ হারান। 

এই হামলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো যে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আবারও ফিরে আসার এক বছর পরও দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও বেশ ভঙ্গুর। দেশটির জনগণ ও নানা সম্প্রদায় এবং এমনকি ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দও নিরাপত্তাহীনতার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন। অথচ তালেবান নেতৃবৃন্দ দেশটিতে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম বলে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আফগানিস্তানে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত থাকলে তালেবান নেতাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি জনগণের আস্থার মাত্রা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মহল মনে করছেন।

 

তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বলেছিল তারা সব গোত্র, মাজহাব ও দলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তবে তালেবানরা অন্য কাউকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না এবং দেশটিতে কোনো বিরোধী মত ও এমনকি তালেবানের নেতৃত্ব কাঠামোর ভেতরেও কোনো ধরনের ভিন্নমত সহ্য করছে না। ফলে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অন্যান্য দল ও গ্রুপের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সমন্বয়ের অভাবের সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তালেবান নেতৃবৃন্দ আফগান মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়ার বিষয়সহ জনগণের নানা দাবি উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারী-বলদর্পি কায়দায় দেশ শাসন করছে। 

দৃশ্যত তালেবান নেতারা অতীত ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না এবং তাদের ঘাটতি ও দুর্বলতাগুলো দুর করতে আগ্রহী নন। আর এ কারণেই তারা জনগণের দাবিগুলো মেনে নিয়ে গণমুখী সরকার-ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টাও করছেন না। সব কিছুকে তারা তালেবানের একচ্ছত্র কর্তৃত্বাধীনে বা নিয়ন্ত্রণে রাখার পুরনো নীতিরই চর্চা করছেন যে নীতি আফগানিস্তানে সব সময়ই ব্যর্থ হয়েছে।

এটা স্পষ্ট আফগানিস্তানে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও  ধর্মীয় সম্প্রদায় বসবাস করায় সব শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন ছাড়া সেখানে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপদ ও স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা কখনও সম্ভব হবে না। 

আফগানিস্তানের সব ক্ষমতা তালেবানরা একচেটিয়াভাবে নিজ দখলে রাখায় সেখানে সুস্থ রাজনৈতিক ও মুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে না। ফলে বিরোধী কোনো কোনো গ্রুপ বা দল সহিংসতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আর এভাবে আফগান সমাজে সংকট ক্রমেই জটিল ও কঠিন হয়ে উঠছে। তাই এইসব সংকট থেকে শিগগিরই মুক্তি পেতে হলে আফগানিস্তানে সব দল ও গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। সন্ত্রাসীদের কোণঠাসা করার জন্য এমন সরকারের অন্য কোনো বিকল্প নেই। খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news