পাশ্চাত্যের কার্যকলাপ পশ্চিম এশিয়ায় দুর্ভোগ ও বিপর্যয় ডেকে এনেছে: ক্লার ডালি
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আয়ারল্যান্ডের সদস্য ক্লার ডালি পশ্চিম এশিয়ার ব্যাপারে পাশ্চাত্যের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'পাশ্চাত্যের নীতি ও কার্যকলাপ দুর্ভোগ ও বিপর্যয় ছাড়া এই অঞ্চলের জন্য আর কোন ফল বয়ে আনেনি। অথচ পশ্চিমারা এখন দাবি করছে যে তারা পশ্চিম এশিয়ায় "স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা" করার চেষ্টা করছে'।
তিনি এক টুইটবার্তায় বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েক দশকের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুঃশাসনের কারণে কেবল সন্ত্রাসবাদ, অভ্যুত্থান, আগ্রাসন ও প্রক্সি যুদ্ধের বিস্তার ঘটেছে যার পরিণতিতে ওই অঞ্চলের জনগণের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ ও বিপর্যয়। অথচ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সকল অপকর্ম ধুয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে, বুকে হাত চাপড়িয়ে আহাজারি করছে এবং এই অঞ্চলে কীভাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে ভাবছে! যা তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর উপস্থিতি এবং তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ডের ফলে যে বিপর্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে কারণেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সদস্য পাশ্চাত্যের ধ্বংসাত্মক নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার এই সমালোচনা পাশ্চাত্যের আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিশেষ করে আমেরিকার বিরুদ্ধে ইরান, চীন ও রাশিয়ার সমালোচনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাশিয়া বহুবার বলেছে, পাশ্চাত্য পশ্চিম এশিয়ার জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং ওই দেশগুলোতে নিজস্ব পদ্ধতির গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় ওই এলাকায় ভয়াবহ অস্থিরতা ও সন্ত্রাবাদের বিস্তার ঘটেছে।
মস্কো ও বেইজিং সবসময়ই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার এবং জোর করে তাদের মূল্যবোধ অন্যদের ওপর চাপানোর অভিযোগ করে আসছে। ওই দুই দেশের কর্মকর্তারা সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকের মতো দেশগুলোতে পাশ্চাত্যের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। চীন ও রাশিয়ার অভিযোগ পাশ্চাত্য ও তাদের আরব মিত্ররা সিরিয়া ও আশেপাশের দেশগুলোতে উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের মোকাবেলা করার পরিবর্তে বরং এ অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে লালন পালন করছে। ফলে এসব সন্ত্রাসীরা নির্মম হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। পাশ্চাত্যের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই এসব সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে এবং লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাধিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে পাশ্চাত্য এসব দেশে হস্তক্ষেপ করছে। রাশিয়া পাশ্চাত্যের এ নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, গত কয়েক বছরের ঘটনাবলীতে বোঝা যায় পাশ্চাত্যের হস্তক্ষেপের কারণে পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটেছে। এমনকি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনেক কর্মকর্তাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু তারপরও পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ায় হস্তক্ষেপ অব্যাহত রেখেছেন।
খবর পার্সটুডে/ এনবিএস/২০২২/একে