মৌসুমী আক্তার প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:১২ পিএম

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত হলো, যার জন্য কোটি কোটি জনতা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল দীর্ঘ সতেরোটি বছর। সকল জল্পনা-কল্পনা, সকল ষড়যন্ত্র আর কটু কথাকে পায়ে মাড়িয়ে বীরের বেশে প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রাখলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দেশনায়ক তারেক রহমান। যারা একদিন বলেছিল তারেক রহমান আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না, যারা তাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত উপহাস আর মিথ্যাচার করেছে, আজ ঢাকার রাজপথে লাখো জনতার ঢল তাদের সেই দম্ভকে চূর্ণ করে দিয়েছে। আজ বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রাজপথ—কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এটি কেবল একজন নেতার ফিরে আসা নয়, এটি বাংলাদেশের হৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এক নতুন সূর্যোদয়। স্বাগতম দেশনায়ক, স্বাগতম আগামীর রাষ্ট্রনায়ক।
দীর্ঘ সতেরো বছর, সময়ের হিসেবে যা নেহাত কম নয়। এই দীর্ঘ সময়ে টেমস নদীর জল অনেক গড়িয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে তারেক রহমানের নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো হয়নি। যারা ভেবেছিল নির্বাসনে পাঠিয়ে, মিথ্যা মামলার পাহাড় জমিয়ে তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা যাবে, আজকের এই জনসমুদ্র তাদের গালে এক সশব্দ চপেটাঘাত। সুদূর লন্ডন থেকে তিনি যখন দেশের বিমানে উঠেছেন, তখন থেকেই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া—আজ একটাই স্লোগান, একটাই নাম। এই আবেগ, এই ভালোবাসা কোনো কৃত্রিমতা নয়, এটি হৃদয়ের গভীর থেকে আসা এক নিখাদ বিশ্বাস।
আমাদের মনে আছে, গত দেড় দশকে তাকে নিয়ে কী জঘন্য অপপ্রচার চালানো হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর তল্পিবাহক কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী আর সমালোচক প্রতিনিয়ত টেলিভিশনের পর্দায় বসে ভবিষ্যৎবাণী করতেন। তারা বলতেন, তারেক রহমান আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফিরবেন না, তিনি নাকি রাজনীতি করার সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। আজ তাদের সেই বিষদাঁত ভেঙে গেছে। আজ সেই সমালোচকরা কোথায় পালাবেন? তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন, তিনি শহীদ জিয়ার রক্ত, তিনি আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য সন্তান। তিনি পালিয়ে যাওয়ার বা পিছু হটার পাত্র নন। তার এই ফিরে আসা প্রমাণ করে যে, সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না।
বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন হাতে অপেক্ষা করছেন তাদের প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। রোদের তীব্রতা বা কোনো বাধাই আজ তাদের আটকাতে পারেনি। যখন তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার আকাশে দৃশ্যমান হলো, তখন নিচে অপেক্ষমান লাখো মানুষের গগনবিদারী স্লোগানে কেঁপে উঠল পুরো এলাকা। এই দৃশ্য বলে দেয়, তারেক রহমান কেবল বিএনপির নেতা নন, তিনি এই দেশের শোষিত, বঞ্চিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। তার আগমনে মানুষের চোখে আজ আনন্দের অশ্রু, মুখে বিজয়ের হাসি।
তারেক রহমানের এই ফিরে আসা আমাদের মনে করিয়ে দেয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সেই ঐতিহাসিক কথা—‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’। তারেক রহমান সেই আদর্শকেই ধারণ করে প্রবাসে থেকেও দলের হাল ধরে রেখেছিলেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন অন্যায়ভাবে কারাবন্দি ছিলেন, তখন তারেক রহমানই হাজার মাইল দূর থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন। আজ তার উপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলেন। আজ মনে হচ্ছে, শহীদ জিয়ার বাংলাদেশ আবার ফিরে আসছে তার আপন মহিমায়।
যারা তাকে 'ফেরারি' বলে উপহাস করত, যারা তার পাসপোর্ট নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছে, আজ তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তারেক রহমান দেখিয়ে দিয়েছেন যে, দেশপ্রেম থাকলে কোনো সীমানাই বাধা হতে পারে না। তাকে দেশে ফিরতে না দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক লবিং থেকে শুরু করে আইনি জটিলতা—কোনো কিছুই বাকি রাখা হয়নি। কিন্তু সত্যের জয় অবধারিত। বাংলাদেশের মানুষ জানে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটি মামলাই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন। আজ তিনি মাথা উঁচু করে দেশে ফিরেছেন, কোনো দয়া বা করুণায় নয়, বরং জনগণের ভালোবাসার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন কেবল একজন ব্যক্তির ঘরে ফেরা নয়, এটি একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা। তিনি তার বক্তব্যে বারবার বলেছেন, তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। তিনি চান একটি আধুনিক, স্বনির্ভর এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে। যেখানে মানুষের বাকস্বাধীনতা থাকবে, যেখানে ভোটের অধিকার থাকবে, যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আজ তার আগমনে তরুণ প্রজন্মের মাঝে এক অভাবনীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই তরুণরাই তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ গড়বে। তার 'টেক ব্যাক বাংলাদেশ' স্লোগান আজ বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে।
আপনারা দেখছেন কীভাবে রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ ফুল ছিটিয়ে তাদের নেতাকে বরণ করে নিচ্ছে। ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে জনতার অভিবাদন গ্রহণ করছেন তারেক রহমান। তার চোখেমুখে দীর্ঘ ক্লান্তির ছাপ নেই, আছে এক অদম্য প্রত্যয়। তিনি জানেন, তার কাঁধে এখন অনেক বড় দায়িত্ব। দেশকে স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে হবে। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি আজকের বার্তা পরিষ্কার—ভেদাভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজকের এই জনজোয়ারকে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর আজ কেবল বাংলাদেশের মিডিয়াতে নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সাথে প্রচার হচ্ছে। বিশ্ববাসী দেখছে, কীভাবে একজন নেতা দীর্ঘ নির্বাসন শেষেও জনগণের হৃদয়ে রাজত্ব করতে পারেন। গণতন্ত্রকামী বিশ্বের কাছে এটি একটি বড় বার্তা। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল, যারা মানবাধিকার হরণ করেছিল, তাদের জন্য আজকের দিনটি এক বড় সতর্কবার্তা। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করবে, তা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত রাস্তার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে মানুষ অপেক্ষা করছে। কেউ কেউ সেই ভোররাত থেকে দাঁড়িয়ে আছে। বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী—সবাই আজ এক কাতারে। অনেককে দেখা যাচ্ছে অঝোরে কাঁদতে, এটি কষ্টের কান্না নয়, এটি প্রাপ্তির কান্না। সতেরো বছরের জমানো কষ্ট আজ আনন্দে রূপ নিয়েছে। মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন দেশনায়ককে এক নজর দেখাতে। তারা বলছেন, "আমরা আমাদের নেতাকে ফিরে পেয়েছি, এখন আর আমাদের কোনো ভয় নেই।" এই ভালোবাসার কোনো প্রতিদান হয় না।
তারেক রহমান দেশে ফিরেই জানিয়েছেন, তার প্রথম কাজ হবে দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করা এবং দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তার লড়াই ক্ষমতার জন্য নয়, তার লড়াই মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর জন্য তার কাছে রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা 'রোডম্যাপ'। বেকার সমস্যা সমাধান এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি তরুণদের নিয়ে কাজ করবেন। তার ভিশন-২০৩০ ছিল একটি মাইলফলক, এখন তিনি আরও যুগোপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবেন।
আজ সেই সব কটুভাষী সমালোচকদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে—আপনারা কি এই জনস্রোত দেখতে পাচ্ছেন? আপনারা কি শুনতে পাচ্ছেন মানুষের এই গর্জন? আপনারা বলেছিলেন বিএনপি শেষ হয়ে গেছে, আপনারা বলেছিলেন তারেক রহমান আর প্রাসঙ্গিক নন। আজ ইতিহাস আপনাদের ভুল প্রমাণ করেছে। আপনারা যত অপপ্রচার চালিয়েছেন, তারেক রহমান ততই শক্তিশালী হয়েছেন। আপনাদের মিথ্যাচারই তাকে মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। এখন সময় এসেছে নিজেদের ভুল শুধরে নেয়ার, কারণ বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করবে না।
প্রিয় দেশবাসী, আজ আমাদের আনন্দের দিন, আজ আমাদের বিজয়ের দিন। তবে মনে রাখতে হবে, পথ এখনো অনেক বাকি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এই যাত্রায় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আসুন, আমরা সকল বিভেদ ভুলে দেশনায়কের হাতকে শক্তিশালী করি। তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হোক বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নবজাগরণ।
‘নেতা আসছে’ তারেক রহমানকে নিয়ে মিজানুর রহমানের কথায় ন্যান্সি ও সালমান রাজের গান