'নতুন বন্দোবস্তের' রাজনীতি করার দাবি করা জাতীয় গণিত পার্টির (এনসিপি) চলতি পথ এখন প্রশ্নের মুখে। আসন্ন ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন বণ্টনের আলোচনা করছে দলটি। এই সিদ্ধান্ত দলের ভিতরেই তৈরি করেছে ফাটল, বাইরে তৈরি করছে সমালোচনা। এমনকি, "দল ও বড় অংশের নেতারা ভুল পথে আছে" বলে এনসিপির একজন যুগ্ম সদস্য সচিব পদত্যাগ করেছেন।
জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হলে আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার পদত্যাগের ইঙ্গিতও আছে। তাহলে প্রশ্নটা স্পষ্ট, দলের অভ্যন্তরে এই নিয়ে ঐকমত্য না থাকলেও কেন জামায়াতের দিকেই ঝুঁকছে এনসিপি?
বিশ্লেষকদের মতে, কারণগুলি হল:
১. বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টনে কোনো সমাধান না হওয়া।
২. 'সংস্কার ইস্যুতে' জামায়াতের সঙ্গে মতের মিল থাকা।
৩. শুধুমাত্র নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ: জামায়াতের কাছ থেকে বেশি সংখ্যক আসন পাওয়ার আশা।
যদিও দলটি আগেই ১২৫টি আসনে নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করেছিল এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিল।
এনসিপি নেতারা অবশ্য বলছেন, এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে সংস্কার প্রশ্নে জামায়াতের সঙ্গে অবস্থানগত মিল থাকায় তাদের দিকেই ঝোঁক বেশি। দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "সংস্কারের পয়েন্টগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এনসিপি, জামায়াত এবং অন্য দলগুলো একমত হয়েছে... নতুন বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট, সেটাকেই আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি।"
'মুভমেন্ট পার্টি' থেকে 'পাওয়ার পলিটিক্সে':
সমাজবিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা এই 'মুভমেন্ট পার্টি'র বর্তমান অবস্থান তাদের শুরুর 'নতুন বন্দোবস্তের' বয়ানের সঙ্গে মেলে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ সাহান মনে করেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে "একটি আলাদা স্বতন্ত্র আইডেন্টি নিয়ে এনসিপির বেড়ে ওঠার যে সম্ভাবনা ছিল, সেটাকে তারা ধ্বংস করবে।"
অন্যদিকে, অধ্যাপক সাব্বির আহমেদের মতে, এনসিপি যখন 'পাওয়ার পলিটিক্সে' ঢুকেছে, তখন "এখানে অন্যায় কিছু নেই"।
নেতাদের পদত্যাগের পালা:
জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার মুখেই দলের যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হকসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা পদত্যাগ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সমঝোতা চূড়ান্ত হলে আরও নেতা দল ছাড়তে পারেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যারা নতুন ধরনের রাজনীতির কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু দলটি পুরনো ধারার ক্ষমতার রাজনীতির পথে হাঁটছে, তারাই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আগেই বলেছিলেন, তারা "সিট কয়টা পাবো" সেটা ভেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। কিন্তু বর্তমান আলোচনা সেই বক্তব্যের বিপরীত এক রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে জোট হলে দলটির সমর্থক সংখ্যা আরও কমে আসারও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
