নিউইয়র্কে বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিও হত্যার ১৮ মাস পর অবশেষে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা সালভাতোরে অ্যালঙ্গি ও ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো-র বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয় এমন সময়ে, যখন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের আইনি সময়সীমা ২৬ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাচ্ছিল।

২০২৪ সালের মার্চে ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিও পুলিশি গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনার পর নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে।

নিউইয়র্ক পুলিশ বডি-ক্যামেরার ভিডিও প্রকাশ করে, যা প্রাথমিক পুলিশ বিবৃতির সঙ্গে দ্বন্দ্বপূর্ণ। শুরুতে পুলিশ দাবি করেছিল, রোজারিও আগ্রাসী আচরণ করেছিলেন। পরে সিসিআরবি (Civilian Complaint Review Board) তদন্ত করে এবং জানায়, পুলিশ কর্মকর্তারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মোট ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, প্রত্যেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চারটি করে অভিযোগ।

উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেন, “বোর্ড অভিযোগগুলো প্রমাণ করেছে এবং কমিশনার টিশ আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ গঠন করেছেন। তবে আমরা জানি পুলিশকে রক্ষা করতে নিউইয়র্ক পুলিশ নানা কৌশল ব্যবহার করে। তাই আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। নিশ্চিত করতে হবে, এই কর্মকর্তারা চাকরি হারান এবং আর কোনো পরিবারে হুমকি তৈরি না হয়।”

২০২৪ সালের ২৭ মার্চ দুপুর ২টায় মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন উইন। তিনি নিজেই ৯১১-এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। পুলিশ উপস্থিত হলে তার ভাই জানান, উইন ‘মানসিক এপিসোড’-এর মধ্যে আছেন। পুলিশ ভেতরে ঢুকতেই উইন আতঙ্কিত হয়ে রান্নাঘর থেকে কাঁচি তুলেন। এক কর্মকর্তা টেজার ব্যবহার করেন, উইন মাটিতে পড়ে যান। তার মা কাঁচি সরান, কিন্তু পরে উইন আবার কাঁচি হাতে নিলে পুলিশ চারবার গুলি চালায়। ঘটনার সময় মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে সব কিছু ঘটেছিল।

কমিউনিটির সমর্থন ও প্রতিবাদ:
পরিবারের পাশে দাঁড়ান বিভিন্ন কর্মী ও সংগঠন, তারা সিটি হলে বিক্ষোভ করেন, শুনানিতে বক্তব্য দেন এবং মামলাকে আলোচনায় রাখেন। কাজি ফৌজিয়া, ডেসিস রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (DRUM)-এর পরিচালক বলেন, “দক্ষিণ এশীয়রা এভাবে সংগঠিত হয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে দেখিনি। এটা সম্ভব হয়েছে নিয়মিত আন্দোলনের কারণে।”

বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন, এক-তৃতীয়াংশ নিউইয়র্কে। বিশেষ করে কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিনের কেনসিংটন, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার ও ম্যানহাটনের কিছু এলাকা। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা কমিউনিটির জন্য সরকারি চাকরি, যেমন পুলিশে যোগদান, স্থিতিশীল জীবিকার পথ হিসেবে দেখা হয়।

তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পুলিশের প্রতি সন্দেহ বাড়ছে। উইনের মৃত্যু কমিউনিটিতে বড় ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। পরিবার ও অধিকারকর্মীরা দাবি করছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কটে পুলিশ নয়, বিশেষ মানসিক স্বাস্থ্য টিম পাঠানো হোক। নিউইয়র্ক মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিও একই দাবি তুলেছেন।

 

news