ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, আইপিএল ২০২৫, এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়েছে, এবং এর পেছনে রয়েছে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট রাজনীতির প্রভাব। এই স্থগিতাদেশের কারণে বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে, যা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, বিসিসিআই-কে নিয়মে বড় পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য কি এবার ‘জামাই আদর’ দেবে বিসিসিআই, নাকি কঠোর শাস্তির পথে হাঁটবে?
আইপিএল ২০২৫ এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়েছে, এবং এর পেছনে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় উত্তেজনাকে দায়ী করা হচ্ছে। এই স্থগিতাদেশের ফলে আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলোতে বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সময়সূচির কারণে অনেক বিদেশি খেলোয়াড় বাকি ম্যাচে অংশ নিতে পারবেন না। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা বড় সমস্যার মুখে পড়েছেন। আগামী ১১ জুন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এই দুই দল মুখোমুখি হবে। ফাইনালের আগে লাল বলের অনুশীলনের জন্য তাদের সময় প্রয়োজন, কিন্তু আইপিএল শেষ হওয়ার পর মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম সময় পাওয়ায় তারা আইপিএলে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
আইপিএল শুরুর আগে বিসিসিআই বিদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কঠোর নিয়ম জারি করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী, যে খেলোয়াড় মেগা নিলামে নাম দেবেন না, তিনি পরবর্তী মিনি নিলামেও অংশ নিতে পারবেন না। এছাড়া, দল পাওয়ার পর কোনো খেলোয়াড় বিনা কারণে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ালে তাকে বরখাস্ত করা হবে। উদাহরণ হিসেবে, ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক এবার দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। ফলে তাকে আগামী মৌসুমের জন্য বরখাস্ত করেছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ। একইভাবে, বেন স্টোকসের মতো তারকা খেলোয়াড়রাও আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সূত্রের দাবি, এই জটিলতার মূলে রয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় চাপ। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট সম্পর্কের টানাপোড়েন আইপিএলের সময়সূচিতে প্রভাব ফেলেছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সময়সূচি নিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা আইপিএলের সময়সূচির সঙ্গে সংঘাত তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিসিসিআই দ্বিধায় পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি খেলোয়াড়রা আইপিএলে না এলে তাদের ব্যান করতে হবে, কিন্তু এতে একাধিক তারকা খেলোয়াড়কে ব্যানের মুখে পড়তে হতে পারে, যা আইপিএলের জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
এই সমস্যা সমাধানে বিসিসিআই এখন নিয়মে বড় পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। সূত্র জানায়, বিসিসিআই বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য নিয়ম শিথিল করতে পারে। যেমন, হ্যারি ব্রুক বা বেন স্টোকসের মতো খেলোয়াড়দের ব্যান না করে পরবর্তী মৌসুমে আবার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, বিদেশি খেলোয়াড়দের আকৃষ্ট করতে বিসিসিআই নতুন সুবিধা ঘোষণা করতে পারে, যেমন নমনীয় সময়সূচি বা অতিরিক্ত আর্থিক প্রণোদনা। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি খেলোয়াড়দের ছাড়া আইপিএলের আকর্ষণ কমে যেতে পারে, তাই বিসিসিআই তাদের ‘জামাই আদর’ দিয়ে আইপিএলের মান বজায় রাখতে চায়।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের কারণে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের উপর চাপ বেশি। তারা আইপিএলের চেয়ে টেস্ট ফাইনালকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিসিসিআই যদি কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করে, তবে আইপিএলের ভবিষ্যৎ মৌসুমে তারকা খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে। তাই বিসিসিআই এখন ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। একদিকে তারা আইপিএলের নিয়মের কঠোরতা বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় চাপ ও আন্তর্জাতিক সময়সূচির জটিলতায় আইপিএল ২০২৫ এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিসিসিআই কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবে, তা নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে কৌতূহল তুঙ্গে। বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য নিয়ম শিথিল করা হবে, নাকি কঠোর শাস্তির পথে হাঁটবে বিসিসিআই?


