অস্ট্রেলিয়ার স্ট্যান্ড-ইন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ আবারও প্রমাণ করলেন কেন তাকে এই যুগের সেরা ফিল্ডারদের একজন বলা হয়। গাব্বায় অ্যাশেজ টেস্টের চতুর্থ দিনে উইল জ্যাকসের ব্যাটের বাইরের ধারে উড়ে আসা বলটিকে বাম দিকে ঝাঁপ দিয়ে এমনভাবে ক্যাচ ধরে ফেললেন যে দর্শক-সমালোচক সবাই হতবাক! তার এই বিড়ালসুলভ রিফ্লেক্স দেখে অবাক জ্যাকস নিজেই।
অ্যাশেজ সিরিজ সবসময়ই রোমাঞ্চকর টেস্ট ক্রিকেটের জন্য পরিচিত, কিন্তু ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তেমন ভালো করতে পারেনি। ২০১০/১১ সালে শেষ জয়ের পর থেকে তারা একটি অ্যাশেজ টেস্টও জিততে পারেনি।
এই অ্যাশেজ সিরিজে এসে ইংল্যান্ড ইতিমধ্যে একটি টেস্ট হেরেছে এবং এখন আরও একটি পরাজয়ের কাছাকাছি, যাকে অনেক সাবেক ইংরেজ ক্রিকেটার অ্যাশেসের ইতিহাসের সবচেয়ে 'দুর্বল' অস্ট্রেলিয়া দল বলেও আখ্যা দিয়েছেন। মজার বিষয়, অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রধান দুই পেসার প্যাট কামিন্স ও জশ হজলউড ছাড়াই এই পারফরম্যান্স দিচ্ছে।
স্মিথের 'অবিশ্বাস্য' ক্যাচ কীভাবে গেম বদলে দিল
চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়লেও অধিনায়ক বেন স্টোকস ও উইল জ্যাকস বেশ শক্ত অবস্থানে ছিলেন। তারা ৭ম উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডকে অস্ট্রেলিয়ার লিড পার করিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তখনই মাইকেল নেসারের একটি ডেলিভারি উইল জ্যাকসের ব্যাটের বাইরের ধারে লাগে এবং প্রথম স্লিপে থাকা স্টিভ স্মিথ বাম দিকে ঝাঁপ দিয়ে মাটি কাঁপানো এক ক্যাচ তুলে নেন।
এই ক্যাচটি ছিল আসলেই অসাধারণ, কারণ স্মিথ মিডিয়াম পেস বোলারের জন্য সাধারণত যত দূর দাঁড়ানো উচিত, তার চেয়ে ব্যাটসম্যানের অনেক কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তবুও দ্রুতগতির সেই বলটিকে তিনি শিকারে পরিণত করেন। অধিনায়কের এই অসামান্য প্রচেষ্টা ম্যাচের গতি পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও হোঁচট খেল ইংল্যান্ড
টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও হোঁচট খেলল ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে জ্যাক ক্রলি ও জো রুটের সুবাদে ৩০০ রান পার করলেও, উত্তরে জ্যাক ওয়েদারল্ড, মার্নাস লাবুশেন, স্টিভ স্মিথ, অ্যালেক্স কেরি, ক্যামেরন গ্রিন ও মিচেল স্টার্কের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের সুবাদে কোনো ব্যাটসম্যানই শতক না করেও অস্ট্রেলিয়া ৫০০+ রান তোলে।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে নামে ১৭৭ রানের পিছিয়ে থেকেই। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া ইনিংস জয়ের পথে। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের তোপের মুখে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরে যায়। শুধুমাত্র অধিনায়ক স্টোকস ও জ্যাকসের জুটিই কিছুটা ভরসা জোগায়।
কিন্তু জ্যাকসের উইকেট পরে, নেসার ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকসকেও আউট করেন এবং শেষ উইকেট হিসেবে ব্রাইডন কার্সকে উইকেটে পরিণত করে ইংল্যান্ডের ইনিংস ২৪১ রানে গুটিয়ে দেন। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৬৫ রান।
টেস্টে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেসারের
তাঁর এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে মাইকেল নেসার টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। এর আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র ২টি টেস্ট খেলেছিলেন এবং ৭টি উইকেট নিয়েছিলেন, যার মধ্যে একটি ইনিংসে সেরা ছিল ৫/৫৬। এবার তিনি পুরো ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছেন এবং টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর প্রথম পাঁচ উইকেটের ইনিংস দখল করেছেন, তা-ও পিঙ্ক বল দিয়ে ডে-নাইট ম্যাচে, যা সত্যিই অসাধারণ অর্জন। এ ম্যাচে মিচেল স্টার্ক ৭৭ রান করেছিলেন এবং ৮ উইকেট নেন।
