বাংলাদেশ আজ প্রবেশ করবে গ্লোবাল নিউক্লিয়ার ক্লাবে

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার দুপুরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রাজুয়েশন (জ্বালানি হস্তান্তর) অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

রাশিয়ার সহায়তায় নির্মীয়মান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। এতে থাকবে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট।  প্রথমটি ২০২৪ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে। দ্বিতীয়টি পরের বছর, ২০২৫ সালে।

 রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কমিশনিং-এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী ৩৩তম দেশ। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী ৩২টি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।

রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিপি) নির্মাণে নিয়োজিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো একক প্রকল্প যাতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি তাজা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর জানান, রাশিয়া থেকে একটি বিশেষ এয়ার কার্গোর মাধ্যমে চালানটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কো থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। শুরুতেই প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরবেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি, এরপর বক্তব্য রাখবেন রোসাটম-এর মহাপরিচালক অ্যালেক্সেই লিখাচেভ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সভাপতির বক্তব্য রাখার পর রোসাটম ডিজি তার কাছে পারমাণবিক জ্বালানির সার্টিফিকেট ও মডেল হস্তান্তর করবেন। মঞ্চে পারমাণবাকি জ্বালানির মডেলসহ একটি সুসজ্জিত নৌকা প্রদর্শন করা হবে।

এরপর ভাষণ দেবেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার রূপপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন পরিদর্শন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন  শুরু হলে জিডিপিতে শতকরা দুই ভাগ অবদান রাখবে। ২০২৫ সালের শুরুতে জনগণ রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাবে। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। সঞ্চালন লাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হবার পরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এটোমিক এনার্জি কমিশনের  (আইএইএ) গর্ভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছে  বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশ বিশ্বের পারমাণবিক দেশের মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

এদিকে, জনমনে এই বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে নানা আতংক  কাজ করলেও এর শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর। তিনি বলেন, এখানকার বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের ধাপে ধাপে অনুমোদন নিতে হয়েছে। মোট ৮ টি স্তর ছিল, প্রত্যেকটি স্তর থেকে পরবর্তী স্তরে যেতে আইএইএ অনুমোদন নিতে হয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষায় পাস করে পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক অনেকগুলো অর্থরিটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছে। এখানে ঘাটতির সুযোগ নেই।

তিনি আরো বলেন, রেডিয়েশন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। রেডিয়েশনের মাত্রা মানুষের সহন ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। আমরা ২৩টি রেডিয়েশন স্টেশন চালু করবো, সেখানে রেডিয়েশনের মাত্রা প্রদর্শিত হবে। যে কেউ দেখতে পারবেন। এসব স্টেশন ১৮ কিমি দূরে পর্যন্ত থাকবে। আমরা দেখেছি সাড়ে ১২ কিলোমিটার দূরে মনিটরিংয়ের প্রয়োজন নেই। মানুষ যেভাবে বসবাস করছে সেইভাবে করতে পারবে।

news