ঈদের দিন সড়কে ঝরল ১৪ প্রাণ

ঈদের দিন রাজধানী ঢাকা, পঞ্চগড়, নরসিংদী, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও নেত্রকোনাসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাতপরিচয় (২৭) এক নারী নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার গুলশান-২ গোলচত্বর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎকক্ষণিকভাবে নিহত নারীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত ওই নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন, উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের লোহাগাড়া সুপারিতলা এলাকার বাছের আলীর ছেলে কাউসার আলী (১৬), একই এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন (১৭), দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের খাঁ পাড়া এলাকার মজনু রহমানের ছেলে সাব্বির (২২) ও একই এলাকার হজরত আলীর ছেলে বরকত (১৭)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঈদে বেড়ানোর জন্য দুটি ভিন্ন মোটরসাইকেলে তিনবন্ধু খাঁ পাড়া থেকে দেবীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন। অপর একটি মোটরসাইকেলে আরও তিনজন লোহাগারা থেকে নীলসাগর যাওয়ার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে কাউসার আলীর মৃত্যু হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে সাব্বির হোসেন মারা যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় খাঁ পাড়ার এলাকার সাব্বির ও বরকত নামের আরও দুজনের মৃত্যু হয়।

দেবীগঞ্জ থানার (ওসি) ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তবে আরো দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে শুনেছি।

নরসিংদীতে বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। গতকাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর দগরিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার গাউসিয়া শাওগাট এলাকা শাহিন (২৩) ও সানি (২২)। নিহতের স্বজনরা জানান, নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া শাওগাট এলাকা থেকে শাহিন, সানি ও সায়েম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মোটরসাইকেল নিয়ে ভৈরবে যায়। সন্ধ্যায় তিন বন্ধু বাড়ি ফিরছিলেন। মোটরসাইকেলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দগরিয়া এলাকায় পৌঁছলে একটি বাস ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে সানি ও শাহিন মারা যান। গুরুতর আহত হন সায়েম। তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান।

খাগড়াছড়ির গুইমারায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, আলী হোসেন (১৭) ও মেহেদী হাসান পায়েল (২০)। তারা দুজন মোটরসাইকেল আরোহী। আলী হোসেন গুইমারা বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদের ছেলে ও বড়পিলাক এলাকার মৃত জামাল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান পায়েল।

পুলিশ জানায়, ঈদের দিন বিকেলে উপজেলার বটতলি এলাকায় মোটরসাইকেল ও শান্তি পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে আলী হোসেন (১৭) গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। অপর দিকে সকালের উপজেলার বড়পিলাক এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান পায়েল। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মো. শফিকুল ইসলাম (২৫) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাওয়া শফিকুল ইসলাম বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর উত্তর পাড়ার ইদন মিয়ার ছেলে। বুধবার তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। আউলিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই ইউসুফ আলি মজুমদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।

যশোরের মনিরামপুরে ঈদের দিন ঘুরতে বেরিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় রাকিবুল ইসলাম রাব্বি (২২) নামে এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল যশোর-চুকনগর মহাসড়কের বেগারীতলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাকিবুল ইসলাম রাব্বি মনিরামপুর উপজেলার বাজুয়াডাঙা গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি জিকজার মডেলের মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে ঘুরতে বের হন রাব্বি। বেগারীতলা নামক স্থানে একটি গাড়ি সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মনিরামপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ বলেন, মনিরামপুরের বেগারীতলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। 

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মোটরসাইকেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিন যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কয়রা কুমিল্লাপাড়া গ্রামের কবীর মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২৩), আমতলা গ্রামের মো. জয়নাল মিয়ার ছেলে হালিম হোসেন (১৮) ও হাটশিরা শিবনগর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে নবী হোসেন (৩৫)। তারা একে অপরের পরিচিত।

কলমাকান্দা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুল হক জানান, ঈদের বিকেলে উপজেলার নাজিরপুর থেকে তিনজন একটি মোটরসাইকেলে চড়ে সীমান্ত সড়ক দিয়ে পাহাড় দেখতে বের হন। তারা সড়কের চেংনিবাজার এলাকায় পৌঁছালে চলন্ত অবস্থায় মোটরসাইকেলের চাকা ফেটে যায়। দ্রুতগতি থাকায় মোটরসাইকেলটি এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পড়ে গেলে মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ( ১১ এপ্রিল) এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ মোটরসাইকেল আরোহী। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

news