রেমালের তাণ্ডবে ১২ জনের মৃত্যু

রোববার রাতে আঘাত হানা প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এই প্রাণহানি ঘটেছে। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি নিজস্ব প্রতিনিধি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কিন্তু সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান জানিয়েছেন ১০ জনের মৃত্যুর খবর। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান-ও রয়টার্সকে একই সংখ্যা বলেছেন। ঘূর্ণিঝড়টি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঢাকা ও আশপাশের জেলা অতিক্রম করে সিলেট সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে যাবে। 

রোববার থেকে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দেশে যে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে তারা হলেন, ভোলার লালমোহন উপজেলার চর উমেদ এলাকার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান উপজেলার মাইসা (৪) ও বোরহান উদ্দিন উপজেলার জাকির (৫০), খুলনার গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬), বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের চর দাড়িয়াল এলাকার জালাল সিকদার (৫৫), জেলার বড়বিঘাই গ্রামের হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান, সাতক্ষীরার নাপিতখালি গ্রামের বাসিন্দা শওকত মোড়ল (৭০), পটুয়াখালীর কলাপাড়ার অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. শরীফ (২৪), দুমকির নলদোয়ানি গ্রামের বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদার, বাউফলের বৃদ্ধ করিম, চট্টগ্রামের খুলশী থানার চৌধুরী নগর শতাব্দী হাউজিং এলাকার পথচারী সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬)।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ উপকূলীয় এলাকা। ঘরবাড়ি ভেঙে বিধ্বস্ত জনপদ। ৫ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। সোমবার বিকেলে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান বলেছেন, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। 

তাছাড়া গাছপালা উপড়ে পড়ে বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। সোমবার দুপুরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিচালন ও বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, তার ছিঁড়ে এবং সঞ্চালন লাইনে গাছপালা ভেঙে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আবার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই বিদ্যুৎ সরবারহ স্বাভাবিক হবে।

ঝড়ের তাণ্ডব থেকে মানুষকে রক্ষায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৮ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে লাখ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও মানুষকে সতর্ক করতে ৭৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন। রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এমনটাই জানিয়েছিলেন। এজন্যই হয়তো মৃত্যের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এদিকে রেমালের কারণে দেশে ১৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মোবাইল সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মোবাইল সেবা বিঘ্ন ঘটায় কল এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তবে অপারেটররা বলছে, তারা মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করতে দ্রুততার সাথে কাজ করছে।

চলতি প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রথম ঘূর্ণিঝড় রেমাল শুধু বাংলাদেশের উপকূলেয় আঘাত হানেনি, তাণ্ডব চালিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায়ও। ঘূর্ণিঝড়ে সেখানখার জন-জীবনও বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এই এলাকা থেকেও অন্তত ছয় জনের প্রাণ হানির তথ্য পাওয়া গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে ঝড়ের কারণে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে অন্তত চারজন, কলকাতায় কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে একজন এবং সুন্দরবন লাগোয়া মৌসুনি দ্বীপে একটি মাটির বাড়ি ধসে এক নারী নিহত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গ কর্তৃপক্ষ বলেছে, রেমালের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার ২০০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে রাজ্যে তিন শতাধিক মাটির ঘর ধ্বংস হয়েছে। বন্ধ রয়েছে অনেক এলাকার ট্রেন চলাচল।

এর আগে রোববার রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর মোংলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী সাগর দ্বীপের আশপাশের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। তবে এই ঝড়ের অগ্রভাগের আঘাত শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে। সোমবার সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্থল নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে সিলেট হয়ে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যাবে।

news