কারো কাছে হাত পেতে চলবে না বাংলাদেশ: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ক্ষমতসীন দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ। আলোচনায় আরো অংশ নেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির সাত মাসের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটি বৈরি মনোভাব দেখা যায়। বাংলাভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টাসহ আর্থসামাজিভাবে আমাদের শোষণ, নির্যাতন-নীপিড়ন শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের দল আওয়ামী লীগ সব সময়ই এদেশের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে। কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পাকিস্তান নামেক দেশটি যেভাবে আমাদের শোষণ করে যাচ্ছিল। ২৩ বছরের সংগ্রাম ও জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেয়া।

তিনি আরও বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করেছিল। পাশাপাশি জনগণের আশ্রয়ই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝে আমি খুজে পেয়েছিলাম হারানো বাবা মায়ের স্নেহ। হারানো ভায়ের স্নেহ। কাজেই এদেশের মানুষের জন্য যেকোন আত্মত্যাগে আমি সবসময় প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাভাষায় কথা বলা, আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ অর্থ, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।

তিনি বলেন, দলটিকে অসাম্প্রদায়িক চেনতায় গড়ে তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে নাম দেওয়া হয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে কাউন্সিল অধিবেশে আওয়ামী লীগের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সাথে যেমন স্বাধীনতা ও অধিকার জড়িত। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত হয়ে সংবিধান দিয়েছিলেন জাতিরপিতা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পায়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, '৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা কেবল জাতির পিতাকে হারাইনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল। জয়বাংলা স্লোগান নির্বাচিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সরকারে আসে। সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। জনগনের সেবা করার সুযোগ পেলে অবশ্যই আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুল ধরে তিনি  বলেন, আমি ২১০০ সালের ডেল্টাপ্লান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে তাহলে এদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবেনা। রুখতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ঝড় বৃষ্টি, বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব সময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি- যখনই বাংলার মানুষ কোন সমস্যায় পড়েছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঝাপিয়ে পড়েছে এবং মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছে। এবারের সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যায়ও সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী গিয়েছে। তাদের সাহার্য্য করেছে। এটা আমাদের আদর্শ। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে জনগণের সেবা করার অধিকার পেয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। সেটাও গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা করেছি। ঠিক এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। চলবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে। বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

news