পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজায় ভীড় মাঝিরঘাট ফাঁকা, সুনসান নীরবতা

বাংলাদেশে ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে নতুন এক ইতিহাস, এই ইতিহাসের নাম ‘পদ্মা সেতু’। রবিবার (২৬ জুন) ভোর ৬টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জন্য স্বপ্নের পদ্মাসেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এর আগে ২৫ জুন শনিবার সকালে স্বপ্নের এ সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সেতু দিয়ে রোববার শুধু সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত জাজিরা ও মাওয়া এই প্রান্ত দিয়ে ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন চলাচল করে। আর টোল আদায় হয় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা। শুধু জাজিরা প্রান্তে আদায় হয় ৩৫ লাখ সাড়ে ২৯ হাজার টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন। আর অন্যদিকে, জাজিরার মাঝিকান্দি ঘাটে কোন একটি ফেরী চলেনি বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন, বিআইডব্লিউটিসিএ মাঝিকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন। আর সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত লঞ্চ চলেছে ৩টি। তাতেও তেমন যাত্রী ছিলো না। ট্রলার চলেনি, কিন্তু কয়েকটি স্পিডবোর্ডে ৩ থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে। অন্যদিকে ঘাটের কাছে থাকা  বেশির ভাগ দোকানে ছিলো না তেমন কোন ক্রেতা। চলছে সুনশান নিরবতা।

সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর রোববার সকাল ৬টা থেকেই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এর আগে এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জেলার মানুষ শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি ঘাট কিংবা মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরী পারাপার হতো।  রোববার স্বপ্নের এই সেতু চালু হওয়ার পর ওইসব ঘাটে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। জাজিরার মাঝিকান্দি-মাওয়ার শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরী পারাপার হতো প্রায় তিন হাজার যানবাহন। এ রুটে ৫টি ফেরী চলাচল করতো। এ রুটে ৩৩টি লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা হতো।এছাড়াও কয়েক’শ ট্রলার ও স্পিডবোর্ড চলতো। তবে রোববার সকাল থেকে  একটি ফেরীও চলেনি আর সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত  লঞ্চ চলেছে ৩টি। তাতে ও তেমন যাত্রী ছিলোনা। ট্রলার চলেনি, কিন্তু কয়েকটি স্পিডবোর্ডে ৩ থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে। 

অন্যদিকে ঘাটের বেশির দোকানে ছিলো না তেমন কোন ক্রেতা। চলছে সুনশান নিরবতা। অন্যদিকে, জমজমাট ছিলো সেতুর দুই প্রান্ত। শুধু সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত জাজিরা ও মাওয়া এই প্রান্ত দিয়ে ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন চলাচল করে। আর টোল আদায় হয় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা। শুধু জাজিরা প্রান্তে আদায় হয় ৩৫ লাখ সাড়ে ২৯ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে ১ম দিনে। সেতু দিয়ে মোটর সাইকেল ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলছে স্বাভাবিক গতিতে। 

সেখানে পুলিশ,সেনাবাহিনী,আনসার সহ সেতু বিভাগের লোকজন সার্বক্ষনিক নিয়ম নীতি মেনে চলার জন্য কাজ করছেন। জাজিরা নাওডোবা টোল প্লাজার নিকট সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার নারী পুরষএস সেতুটি এক নজর দেখার জন্য ভিড় করছে। কেউ ছবি তুলছে।কেউবা সেলফি তুলছে। সেতু দিয়ে মোটর সাইকেল যেতে নিষেধ থাকার কারনে শত শত মোটর সাইকেল ঢাকা যাওয়ার জন্য আটকা পড়ে। সোমবার বিকেল নাগাদ একটি ফেরী মাওয়া শিমুলিয়া থেকে এসে মাঝি কান্দি ফেরী ঘাট থেকে তাদেরকে ওপারে পার করে দেয়।মাঝিকান্দি সংশ্লিষ্টদের দাবি, তাদের এলাকাকে পর্যটন এলাকায় রুপান্তরিত করা। তাহলে তাদের জীবনজীবিকায় কোনো সমস্যা হবে। 

খুলনা থেকে আসা  একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক আহমদ আলী বলেন, আগের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে চলাচল করতাম। কি যে ভোগান্তি বলে শেষ করা যাবে না। আজ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলাম। কতো দ্রুত খুলনা থেকে পদ্মাসেতুর টোল প্লাজায় এসে পৌছলাম। কম সময়ে টোল দিয়ে এখন দ্রুত ঢাকা যেতে পারবো। শরীযতপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসের যাত্রী বলেন, ফেরীঘাট, লঞ্চঘাট, ট্রলারঘাট ও স্পিডবোর্ড ঘাট সবই ছিলোই সিন্ডিকেটের দখলে। কত যে ভোগান্তির শিকার হয়েছি। তা বলে বোঝাতে পারবো না। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে।
মাঝিকান্দি লঞ্চঘাটের ইজারাদের প্রতিনিধি, ট্রলার চালক ও স্পিডবোর্ড চালক কয়েকজন বলেন, আমাদের এই শূণ্য হয়ে গেছে। আজ (রবিবার)এ ঘাটে সারাদিনে মাত্র দেড়-দুইশো যাত্রী এসেছে। আমাদের এই ঘাটকে পর্যটন এলাকায় রুপান্তরিত করার দাবি জানাচ্ছি। না হয় আমাদের বেঁচে থাকা দ্বায় হবে।
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসিএ মাঝিকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, এ রুটে কোনো যানবাহন পারাপার হতে আসেনি, তাই একটিও ফেরী চলাচল করেনি, ফেরীগুলো শিমুলিয়া ঘাটে রয়েছে। আগে এই রুটে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার যানবাহন পারাপার হতো।
 

news