জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমাতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানো এবং কার্যকর কর আরোপের দাবি উঠেছে। গবেষক, চিকিৎসক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা এই দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি জানিয়েছেন। তারা প্রস্তাব করেছেন, সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এতে তরুণদের মধ্যে সিগারেট সেবনের প্রবণতা কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণের তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ সম্ভব হবে।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম জানান, প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে কমে ১৩.০৩% হবে। এতে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত হবেন এবং ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আয় ৬৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩% বেশি।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ৩০% ক্যান্সার তামাকের কারণে হয়। তিনি তামাকসহ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যে ‘সিন ট্যাক্স’ প্রবর্তন এবং এই অর্থ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যয়ের প্রস্তাব করেন। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত সংস্কারেরও আহ্বান জানান।
একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা বলেন, তামাকপণ্যে কর বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, কিন্তু তামাক কোম্পানির লাভ কমবে। তিনি তামাক কোম্পানির চোরাচালান বাড়বে বলে মিথ্যা প্রচারণার বিরোধিতা করে বলেন, বাংলাদেশে সিগারেট দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সস্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল জানান, তামাকের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্বের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, তামাক বিক্রির রাজস্ব স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫% পূরণ করে, কিন্তু কার্যকর কর আরোপে রাজস্ব ২৮% পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
তামাকপণ্যে কার্যকর কর আরোপ জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই দাবি কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাকর্মীরা উদগ্রীব।


