ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি চত্বরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। চারপাশে তখন শুধু কান্না, স্লোগান আর নিঃশব্দ শোক—একটি প্রজন্ম হারিয়েছে তার সাহসী কণ্ঠস্বর।

এর আগে দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে শহীদ হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। জানাজা শেষে বিকেল ৩টার দিকে মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে নিয়ে আসা হয়।

বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে হাদির মরদেহ ফ্রিজার ভ্যান থেকে নামানো হয় দাফনের প্রস্তুতির জন্য। এই মুহূর্তেই ভেঙে পড়েন তার ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধারা। কেউ চিৎকার করে বলেন, “হাদি ভাই, আমাদের রেখে একা কোথায় চলে যাচ্ছো!” কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।

মরদেহ নামানোর সময় রাজনৈতিক সহকর্মীদের আহাজারি উপস্থিত সবাইকে অশ্রুসিক্ত করে তোলে। ‘আমাদেরও নিয়ে যাও ভাই’—এই আর্তনাদে যেন পুরো কবরস্থান থমকে যায়। অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। হাদির সঙ্গে দীর্ঘদিন আন্দোলন করা সহযোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার ভেঙে পড়েন।

শনিবার বিকেল ৩টার দিকে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের কবরস্থানে পৌঁছায়। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে শবযাত্রায় অংশ নেওয়া কাউকেই কবরস্থানের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়েই মানুষ চোখের জলে প্রিয় মানুষটিকে বিদায় জানান।

কবরস্থানে ঢোকার মুহূর্তে অসংখ্য সহযোদ্ধার চোখে অশ্রু ঝরতে দেখা যায়। ঢাবি শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, হাদি ভাইয়ের সঙ্গে বহুদিন নির্বাচনী ও আন্দোলনের কাজ করেছি। তার স্মৃতি ভুলে থাকা অসম্ভব। এমন একজন হাদি আর কখনও ফিরে আসবেন বলে মনে হয় না।

এ সময় হাদির লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ছাদে দেখা যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ও ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবেরকে। তারা মাইকে জনতাকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মানুষের ঢল থামানো যাচ্ছিল না। অনেকেই গাড়ির সঙ্গে হেঁটে যেতে শুরু করলে একাধিকবার যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা নেয়। তবুও ‘হাদি হাদি’ স্লোগানে পুরো এলাকা বারবার মুখর হয়ে ওঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেওয়ার পথে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় সাময়িকভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রশাসন জানায়, জনসমাগমের কারণে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। হাদি আজ নেই, কিন্তু তার আদর্শ, সাহস আর সংগ্রামের স্মৃতি থেকে যাবে—কবি নজরুলের সমাধির পাশেই, ইতিহাসের পাতায়।

news