বাংলাদেশের হাই-টেক শিল্পে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি শুরু হলো ওয়ালটনের তৈরি মাদারবোর্ড (পিসিবি ও পিসিবিএ)। বিশেষত্ব হলো—এই মাদারবোর্ড ব্যবহৃত হবে আমেরিকায় তৈরি সর্বাধুনিক গানশট শনাক্তকরণ ও জরুরি উদ্ধার সিস্টেমের সিকিউরিটি ডিভাইসে। অর্থাৎ জীবন রক্ষাকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জামে এবার যুক্ত হলো বাংলাদেশি হার্ডওয়্যার।
ওয়ালটনের এই অর্জন শুধু দেশের জন্যই গর্ব নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি প্রযুক্তিপণ্যের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিলো।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে এই সাফল্য উদযাপনে আয়োজন করা হয় এক জমকালো অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করা ওয়ালটন এবার আমেরিকার উইসকনসিন প্রদেশের প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন-এর কাছে ২,৫০০টিরও বেশি মাদারবোর্ড সরবরাহ করছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টাকা।
এই মাদারবোর্ডগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ব্যবহৃত হবে, যেখানে তাৎক্ষণিক অবৈধ শুটিং শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, সতর্কতা এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় বিশাল ভূমিকা রাখবে। অডিও ও ভিজ্যুয়াল সতর্কবার্তার মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে এই সিস্টেম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন— “যে দেশে সিলিকন ভ্যালি আছে, সেই দেশে আমরা মাদারবোর্ড রপ্তানি করছি। এটি ওয়ালটন ও বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক সাফল্য।”
তিনি জানান, বিশ্বজুড়ে পিসিবি ও পিসিবিএ বাজারের পরিমাণ প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামী কয়েক বছরে আরও ৩০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে। এই বিশাল মার্কেটে ওয়ালটনের যাত্রা শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির মধ্য দিয়ে।
সেফপ্রো টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট পল এল একারট ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বলেন, “ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতে ওয়ালটন এখন ইনোভেশন, কোয়ালিটি আর আস্থার প্রতীক। ওয়ালটনের মাদারবোর্ড আমাদের সিকিউরিটি ডিভাইসের মান আরও উন্নত করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, ওয়ালটন ইতোমধ্যেই বিশ্ববাজারে সম্মানজনক স্থান করে নিয়েছে এবং বাংলাদেশকে প্রযুক্তিপণ্যের হাব হিসেবে পরিচিত করছে।
ওয়ালটন বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র পিসিবি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত এসব মাদারবোর্ড ব্যবহার হচ্ছে দেশীয় ইলেকট্রনিক্সেও। শুধু দেশে নয়, সম্প্রতি ইউরোপের গ্রিসেও ১০ হাজারের বেশি পিসিবি ও পিসিবিএ সফলভাবে রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এস এম রেজাউল আলম, চেয়ারম্যান ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জানান—বাংলাদেশে এই উৎপাদনের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা দ্রুত পণ্য পাচ্ছেন। একইসঙ্গে রপ্তানি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ভাণ্ডারেও বড় অবদান রাখছে ওয়ালটন।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা উন্মোচন করেন ওয়ালটনের নতুন দুই মডেলের পরিবেশবান্ধব তাকিওন ই-বাইক। আধুনিক ডিজাইন, শক্তিশালী মোটর, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং প্রতি কিলোমিটার মাত্র ১০-১৫ পয়সা খরচে চলার সুবিধাযুক্ত এই ই-বাইকগুলো শহর ও গ্রামে স্মার্ট যাতায়াতের নতুন সমাধান হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশি প্রযুক্তি এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হয়ে ইতিহাস গড়লো। ওয়ালটনের এই অর্জন দেশের প্রযুক্তি শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।


