বাংলাদেশের সংগীতজগতে এক কিংবদন্তির নাম নগরবাউল জেমস। পুরো নাম মাহফুজ আনাম জেমস, তবে ভক্তদের কাছে তিনি শুধু ‘গুরু’। তার গান মানেই তারুণ্যের উন্মাদনা, মঞ্চ মাতানো সুর আর অদম্য শক্তি। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) জন্মদিন পালন করলেন এই প্রখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী। ৬১ বছর পূর্ণ করে এবার ৬২-তে পা রাখলেন তিনি। বিশেষ দিনটিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন বাংলা সংগীতের এই আইকন।

১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্ম হলেও শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে চট্টগ্রামের সমুদ্রতীরেই বেড়ে উঠেছিলেন জেমস। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে জেমস শুরু করেন সংগীতচর্চা। গান নিয়ে এতটাই একনিষ্ঠ ছিলেন যে একসময় ঘর ছেড়ে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার মূল সংগীত ক্যারিয়ার।

১৯৮০ সালে জেমস গঠন করেন ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড, যা তাকে প্রথম আলোচনায় আনে। পরে এহসান এলাহী ফানটিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন নগরবাউল। বাংলা সংগীতে প্রথমবারের মতো তিনিই পরিচয় করান সাইকেডেলিক রক ধারা। ১৯৮৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। এরপর একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’ (১৯৮৮) মুক্তি পায়, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বলিউডেও পৌঁছে যায় জেমসের গান। ২০০৪ সালে প্রিতমের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘গ্যাংস্টার’-এ তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ঝড় তোলে। টানা এক মাসেরও বেশি সময় বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল গানটি। এরপর ‘ওহ লামহে’ (২০০৬)-এ ‘চল চলে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্টো’ (২০০৭)-এ ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’, আর সর্বশেষ ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ার্নিং’ ছবিতে ‘বেবাসি’ গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।

তার জনপ্রিয় গানগুলোর তালিকায় আছে— ‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে আমি বলছি মা’, ‘দুখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘বাবা কত দিন’, ‘বিজলী’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মিরাবাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ প্রভৃতি।

জেমসের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে—
নগরবাউল ব্যান্ড অ্যালবাম: স্টেশন রোড (১৯৮৭), জেল থেকে বলছি (১৯৯৩), নগর বাউল (১৯৯৬), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), দুষ্ট ছেলের দল (২০০১)।
একক অ্যালবাম: অনন্যা (১৯৮৯), পালাবে কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনি দুঃখ করোনা (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৭), কাল যমুনা (২০০৮)।

সংগীতের জন্য জীবন উৎসর্গ করা এই তারকা এখনও ভক্তদের কাছে অনুপ্রেরণার নাম। জন্মদিনে ভক্তরা একস্বরেই বলছেন— “গুরু চিরজীবী হও।”

 

news