বলিউডে যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিল্পী পরিবারগুলোর রাজত্ব, সেখানে পতৌদি পরিবারের ইতিহাস শুধু সিনেমাতেই নয়, রাজবংশীয় ঐতিহ্যেও সমৃদ্ধ। একসময় দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত ছোট রাজ্য পতৌদির নবাব ছিলেন কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার মনসুর আলি খান। বর্তমানে পরিবারের দায়িত্ব হাতে রেখেছেন তার ছেলে, বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খান।

মুম্বাইয়ে বসবাস করলেও সাইফ ও তার পরিবার শীতের সময় কাটান ঐতিহ্যবাহী পতৌদি প্যালেসে। প্রায় ১০ একরজুড়ে বিস্তৃত এই প্রাসাদে আছে ১৫০টি কক্ষ, যার মধ্যে ৭টি শয়নকক্ষ, ৭টি পোশাক পরিবর্তনের ঘর এবং ৭টি বিলিয়ার্ড রুম। প্রতিটি কোণায় আছে রাজকীয় ঝলক এবং সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো।

প্রাসাদটি ডিজাইন করেছিলেন রবার্ট টর রাসেল। আমেরিকান ম্যাগাজিন আর্কিটেকচারাল ডাইজেস্ট জানিয়েছিল, ২০১৯ সালে এই প্রাসাদের বাজারমূল্য প্রায় ৮০০ কোটি রুপি।

সম্প্রতি স্কয়ার ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাইফ জানান, প্রাসাদটির বিশাল বইয়ের সংগ্রহই তার গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, “আমার দাদা ইফতিখার আলি খানের বইগুলোতে রাজপরিবারের প্রতীকসহ একটি স্ট্যাম্প থাকত। সেখানে রোমান সভ্যতার যৌন সংস্কৃতি থেকে সামরিক ইতিহাস, এমনকি আফ্রিকার শিকার বিষয়ক বইও ছিল। এটা একদম বিচিত্র সংগ্রহ!”

প্রাসাদের দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর সাইফ একটি পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছোটবেলায় তার বাবা যেভাবে তাকে মহাভারত ও গ্রিক মিথের গল্প শোনাতেন, এখন তিনিও ছেলে তৈমুরকে শোবার আগে ভয়ংকর গল্প শোনান।

২০১৪ সালে নবাবপুত্র সাইফ আলি খান প্রাসাদটি পুনরুদ্ধার করেন। তিনি বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর প্রাসাদটি হোটেল হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা সেটি ফিরিয়ে নিই। যদিও এটি সরাসরি কেনা নয়, বরং লিজ ক্লিয়ার করা ছিল। প্রাসাদটি নিমরানা হোটেলস গ্রুপের কাছ থেকে পুনরায় নিজেদের অধিকারে আনা হয়, যার জন্য চলচ্চিত্র থেকে উপার্জিত অর্থ খরচ করতে হয়েছে। তবে আমি সন্তুষ্ট, কারণ নিজের হাতে কিছু গড়তে পেরেছি।”

একই সাক্ষাৎকারে সাইফ আলি খান অভিনয় জীবনের কথাও জানান। তিনি বলেন, “আমি নিজেকে সত্যিকারের অভিনেতা হিসেবে ভাবতে শুরু করি ২০০০ সালের শুরুর দিকে। মায়ের সঙ্গে এক কথোপকথনই জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি তখন উত্তেজিত হয়ে বললাম ফ্রান্সে শুটিংয়ে যাচ্ছি। মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কবে একজন অভিনেতার মতো কথা বলবে? কবে কোনো চরিত্র নিয়ে উত্তেজিত হবে?’ এরপর থেকেই নিজের অভিনয়জীবনকে গুরুত্ব দিতে শুরু করি। সেই পথেই আসে ওমকারা, সেক্রেড গেমস–এর মতো জনপ্রিয় কাজ, যা বলিউডে তাকে একজন বহুমুখী অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”

 

news