থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো বিপত্তি! পুলিশের বেধড়ক মারে হাসপাতালে যুবক

 থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে পুলিশের (police) বিরুদ্ধে বেধড়ক মারের (beat) অভিযোগ তুললেন এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির (Siliguri) ফাঁসিদেওয়া থানায়। তাঁর অভিযোগের তির থানার সাব ইন্সপেক্টর শঙ্কর রায়ের দিকে। জানা গেছে, বেদম মারের চোটে ওই ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন জায়গায় লাঠির দাগ বসে গিয়েছে। গুরুতর আঘাতও পেয়েছেন। তাঁর নাম মহম্মদ রহমান।

সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের ধামনাগছ এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ রহমান পেশায় লেপ, কম্বল, শীতবস্ত্র তৈরি করেন। প্রতিবারই শীতের মরশুমে গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকের বাড়ির নতুন লেপ-কম্বল বানিয়ে দেন। বুধবার সকালে নিজের মোটরবাইকে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি৷ সেইসময়েই ধামনাগছ এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ রকিবুল তাঁকে পাকড়াও করে।

রকিবুল রহমানকে বলে যে, গত বছর তার বাড়িতে লেপ তোষকের কাজ করেছিলেন রহমান। কিন্তু সেগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর রকিবুল দাবি জানায়, এবছর একেবারে বিনা খরচে নতুন তোষক বানিয়ে দিতে হবে। নাহলে সে ছাড়বে না। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। সেই নিয়েই শুরু হয় বচসা। রহমানের অভিযোগ, তাঁর সমস্ত সামগ্রী, মোটরবাইক, টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে রীতিমতো মারধর করে রকিবুল। গলায় ছুরি ধরে খুনের হুমকিও দেয়। সেখান থেকে কোনওমতে পালিয়ে তিনি সোজা চলে আসেন ফাঁসিদেওয়া থানায়। যত বিপত্তি এরপরেই শুরু হয়।

রহমানের কথায় , “সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ থানায় ঘটনার লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। সেখান থেকে সাব-ইন্সপেক্টর শঙ্কর রায়-সহ আরও কয়েকজন আমার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায়। ওখানে গিয়ে মহম্মদ রকিবুলের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে পুলিশ। তারপর আমাকে ও রকিবুলকে নিয়ে থানায় চলে আসে৷ এরপরই শুরু হয় অত্যাচার। কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে বেধড়ক মারে। চারটে লাঠি ভেঙে দেয়। খবর পেয়ে আমার পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীরা থানার সামনে চলে আসে। সেই দেখে পুলিশ আমায় ছেড়ে দেয়।”

এরপর তিনি বলেন, “পুলিশ অত লোক দেখামাত্রই আমায় ছেড়ে দিলেও সাদা কাগজে দু’জায়গায় সই করিয়ে নেয়৷ হুমকি দেয় বাইরে এই কথা না বলার জন্য। সঙ্গে মদের বোতল ও গাঁজার সঙ্গে আমার ছবি তুলে নেয় পুলিশ। থানা থেকে ছাড়ার পর পরিবারের লোকেরা আমাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আমায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”

জানা গেছে, বাইক-সহ অন্যান্য সামগ্রী ফিরিয়ে দিলেও মহম্মদ রহমানের টাকা ফেরত দেয়নি পুলিশ। অন্যদিকে রকিবুলকে থানায় নিয়ে আসার পরপরই ছেড়ে দেয় পুলিশ। রহমান বলছেন, “আমি তো অভিযোগ জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গেই পুলিশ এমন কেন করল? পুলিশের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই অভিযোগ জানাব।”

এদিকে রহমানের স্ত্রী সাজদা খাতুন জানান, “মানুষটাকে মেরে মেরে পুলিশ শেষ করে দিয়েছে। আমরা ও এলাকাবাসীরা খবর পেয়ে থানার সামনে না জমায়েত হলে হয়ত মেরেই ফেলত। আমরা এর বিচার চাই। পুলিশ আইনের রক্ষক। সে কেন এভাবে মারবে?” একই সুর এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা পলি সাহার গলাতেও। তিনি বলেন, “আমরা কোনও সমস্যা হলে প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাই। কিন্তু প্রশাসন এভাবে হুজ্জুতি করবে , অত্যাচার করবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কে এভাবে মারার অনুমতি দিল তা নিয়ে আমি তদন্ত চাইছি।”
খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news