স্যান্ডার্সের মতো একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ যখন লিখলেন, “উদ্দেশ্য স্পষ্ট… ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে,” সেটা অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদেরও যে একই রকম বক্তব্য এসেছে, সেকথা এখন আর গোপন নয়। তবু সমস্যাটা কেবল সময়ের দেরিতে এসে পৌঁছানো নয়—অবজারভেশনে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো এই যে স্যান্ডার্স তার ব্যাখ্যার শুরুতেই বলেন, “হামাস এটা শুরু করেছে।”

এই ধাঁচেই শুরু করলে ঘটনায় যারা ভুক্তভোগী—তাদের দোষারোপে বাধ্য করা হয়, আর বিদ্রোহ বা প্রতিরোধকে অপরাধের দিকেই ঠেলে দেওয়া হয়। শিকারকেই দোষারোপ করলে ইতিহাসের দীর্ঘ লুটতরাজ, উপনিবেশবাদী নিপীড়ন ও ভূমি দখলের রেকর্ডগুলো অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি আইনগতভাবে ও নৈতিকভাবে অপূর্ণ—এবং ভবিষ্যতে বিপজ্জনক নজিরও গড়ে দিতে পারে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন যেভাবে গণহত্যা সংজ্ঞায়িত করেছে, তা সুস্পষ্ট: কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা জাতীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে করা কাজগুলো—হত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, জীবনধারণের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি, জন্ম রোধের ব্যবস্থা আর জোরপূর্বক জনসংখ্যা স্থানান্তর—এসবই গণহত্যার নমুনা। গাজার বাস্তবতায় এই পাঁচ ধরণের বৃত্তান্তেরই আলামত অনেক জায়গায় মেলে।

আইনি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল—গণহত্যা আইন কোন কিছুকে “বর্ণিত অজুহাত” হিসেবে মেনে নেয় না। কনভেনশনে এমন কোন ধারা নেই যা বলে, “যদি অন্য পক্ষ প্রথমে কিছু করেছে, তাহলে…।” গণহত্যা কখনই ন্যায্য বা আংশিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে না।

স্যান্ডার্স ইসরায়েলের “নিজেকে রক্ষা করার অধিকার” উল্লেখ করেছেন—এটি আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বিশেষভাবে বিবেচ্য। সাধারণত কোনো রাষ্ট্র যদি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে, তারপর সেটিকে “বিদেশি” বলেই আক্রমণ চালায় এবং একই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে, তাহলে সেটি আন্তর্জাতিক আইনের ভঙ্গ হতে পারে। তাই এই ধরনের দাবি স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করার আগে আইনি ও বাস্তব প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখা জরুরি হতে থাকে।

সংক্ষেপে বলা যায়—বার্নি স্যান্ডার্সের স্বীকৃতি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপুর্ন হলেও তার উপস্থাপনা এবং দোষারোপের ফোকাস নানান প্রশ্ন রোপণের বিষয়। নৈতিকভাবে ও আইনি দিক থেকেই বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে আলোচিত না হলে ভবিষ্যতে একই ধরনের সমস্যাগুলো পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থেকে যায়।

 

news