গাজায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামাতে নতুন করে আলোচনায় বসেছে ইসরায়েল ও হামাস। মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত এই পরোক্ষ আলোচনার প্রথম দিনটি শেষ হয়েছে “ইতিবাচক” পরিবেশে। মধ্যস্থতাকারীদের আশা, আলোচনার এই অগ্রগতি যুদ্ধবিরতির পথে বড় একটি পদক্ষেপ হতে পারে। মঙ্গলবারও আলোচনার দ্বিতীয় দফা চলবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। প্রথম দিনের আলোচনায় একটি প্রাথমিক রোডম্যাপ তৈরি করা হয়—যার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী আলোচনা এগোবে।

হামাস প্রতিনিধি দল মধ্যস্থতাকারীদের জানায়, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ বন্দীদের মুক্তি নিয়ে আলোচনায় বড় বাধা তৈরি করছে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া এবং জাহের জাবারিন, যাদের গত মাসে হত্যা করার উদ্দেশ্যে কাতারে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

মিসরের আল-কাহেরা নিউজ জানায়, আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—বন্দী বিনিময়, যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে হামাস ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে।”

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ‘রেড লাইন’ বা সীমারেখা আছে কি না—যেমন হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, “যদি কিছু শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে আমরা তা করব না। তবে আমি মনে করি আমরা ভালো অগ্রগতি করছি। সত্যিই বিশ্বাস করি, এই চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব।”

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প হামাসকে আলোচনায় আনতে আরব ও তুরস্কের যৌথ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি তিনি ইসরায়েলি জনগণেরও প্রশংসা করেন এবং তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ-এর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের আলোচক দলের প্রধান। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও এই আলোচক দলের অংশ।

মিসরের বার্তা সংস্থা আল-কাহেরা নিউজ নিশ্চিত করেছে, আজ (মঙ্গলবার) ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনার দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, আজ ৭ অক্টোবর, হামাসের ইসরায়েলে হামলার দুই বছর পূর্তি—যে হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত ও প্রায় ২০০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল। সেই হামলার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা অভিযানে গাজায় ৬৭,১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৬৯,৬৭৯ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক আদালত এবং ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চলমান যুদ্ধকে ইতোমধ্যেই ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝেও সোমবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক পোস্টে বলেছেন, “ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাব এই ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটানোর একটি সুযোগ তৈরি করেছে—যা এখনই কাজে লাগানো উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “আরও রক্তপাত রোধ করতে এবং স্থায়ী শান্তির পথে এগোতে হলে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি ও বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এখন অত্যন্ত জরুরি।”

 

news