৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে প্রায় ৮০ হাজার ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছেন, যা দেশটির অভিবাসন ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। কেউ যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে পালাতে চেয়েছেন, আবার কেউ বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ইহুদি-বিরোধী মনোভাব থেকে আশ্রয় খুঁজেছেন।

২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর, চ্যান্টাল ও নিকি ইয়ং লন্ডন ত্যাগ করে ইসরায়েলে পাড়ি জমান। বিমানবন্দরে পরিবারের সদস্যরা ‘দাদু-দাদীকে স্বাগতম’ লেখা ব্যানার নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তাঁদের সবচেয়ে ছোট ছেলে নাথানেল ইয়ং আর বেঁচে নেই — ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে নিহত হন ২০ বছর বয়সী এই তরুণ সৈনিক।

নাথানেল দুই বছর আগে “আলিয়াহ” (ইসরায়েলে ইহুদি অভিবাসনের প্রতীক) করেছিলেন এবং গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মৃত্যু সত্ত্বেও, বাবা-মা ছেলের স্বপ্ন পূরণে দেশ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

“আমরা ভাবলাম, যদি নাথানেল ইসরায়েলের জন্য জীবন দিতে পারে, তাহলে আমরাও ওর স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখব,” বলেন চ্যান্টাল।

অভিবাসনের পাল্টে যাওয়া ধারা

জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সার্জিও ডেলাপারগোলা জানান, ২০২৩ সালে ইসরায়েলে “নেতিবাচক অভিবাসন ভারসাম্য” দেখা গেছে—অর্থাৎ আসার চেয়ে যাওয়ার সংখ্যা বেশি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৮০,০০০ ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছেন, যার মধ্যে শুধু অক্টোবর মাসেই ১৫,০০০ জন। পরবর্তীতে ২৫,০০০ জন ফিরে এলেও, মোট ২৫,০০০ জনের নেট ঘাটতি থেকে গেছে।

ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি, যার মধ্যে ৭২ লাখ ইহুদি—তাই এই সংখ্যা ছোট নয়।

কেউ আশ্রয় খুঁজছে, কেউ ফিরছে শিকড়ে

২৪ বছর বয়সী ইয়োচেভেদ রুটেনবার্গ, টেক্সাসের বাসিন্দা, হামলার পর ইসরায়েলে পাড়ি জমান স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। আজ তিনি তেল আবিবে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন, যেখানে ৪৫,০০০ স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত আছেন।
তিনি বলেন, “আমি দেখেছিলাম, সবাই সাহায্য করতে চায়—কিন্তু কেউ জানে না কীভাবে।”

অন্যদিকে, কেউ কেউ ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ইহুদি-বিরোধিতা দেখে ইসরায়েলকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবেছেন। জার্মান লেখিকা মিরনা ফাঙ্ক হামলার দুই মাস পর মেয়ে নিয়ে ইসরায়েলে চলে যান।
“জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে মৃত্যুর হুমকি পেতাম,” তিনি বলেন। “ইসরায়েলে জীবন অনেক স্বাধীন।”

বিভক্ত রাজনীতি, ভীত সমাজ

অন্যদিকে, অনেক ইসরায়েলি রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্লান্ত হয়ে দেশ ছাড়ছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার ও সমাজের বিভাজন এখন “অসম্ভব পর্যায়ে।”
ইসরায়েলি শিক্ষার্থী নোয় ক্যাটসম্যান, যার ভাই হামাসের হামলায় নিহত হন, জার্মানিতে স্থায়ী হতে আবেদন করেছেন।
“আমি ভূমিকে ভালোবাসি, মানুষকে ভালোবাসি, কিন্তু রাষ্ট্রকে ভালোবাসি না,” তিনি বলেন।

ইসরায়েল—নিরাপত্তা না অনিশ্চয়তা?

অধ্যাপক ডেলাপারগোলা মনে করেন, ইসরায়েলে অভিবাসন এখন এক জটিল বাস্তবতা।
“ইহুদি-বিদ্বেষ এক বড় কারণ হলেও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে,” তিনি বলেন।

আলিয়াহ সংগঠনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রধান ইগাল পালমোর জানান, “অনেকেই এখন আসতে দ্বিধা করছেন, কিন্তু অনেকে আবার মনে করছেন—এই কঠিন সময়ে ইসরায়েলের পাশে থাকা তাদের দায়িত্ব।”

যুদ্ধ, বিভাজন ও ভয়ের মাঝেও অনেকে এখনও বলেন—
“দেশটা নিখুঁত নয়, কিন্তু এটাই আমাদের ঘর।”

 

news