গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে এবার বড় ধরনের বিতর্কে জড়ালেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দায়ের করা এক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে—গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় সহযোগিতা করার। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইতালি ইসরায়েলকে মারাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করে যুদ্ধাপরাধে ভূমিকা রেখেছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরএআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেলোনি বলেন, “আমাকে গাজায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
তিনি জানান, শুধু তাকেই নয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গুইডো ক্রোসেটো ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানিকেও অভিযোগের তালিকায় রাখা হয়েছে।
মেলোনি আরও জানান, ইতালির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সংস্থা লিওনার্দোর প্রধান রবার্তো সিঙ্গোলানির নামও থাকতে পারে ওই মামলায়।

“ইসরায়েলকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করে ইতালির সরকার চলমান গণহত্যা ও ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।”

এই মামলাটি দায়ের করেছে এক ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা, যারা আদালতকে মেলোনির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক গণহত্যার তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।

গত মাসে জাতিসংঘের এক স্বাধীন তদন্তে বলা হয়েছিল, গাজায় ইসরায়েলের হামলা ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সেই তদন্তে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞরাও একমত হয়েছিলেন।

যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, গণহত্যার অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়নি।
আইসিসি ইতোমধ্যেই হামাস নেতাদের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তবে যাদের নাম রয়েছে, তারা বেশিরভাগই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

মেলোনি বলেন, “ইতিহাসে এরকম অভিযোগের আর কোনো উদাহরণ নেই। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

অস্ত্র রপ্তানি ও বিতর্ক

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইসরায়েলে “প্রধান অস্ত্র” রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ইতালি তৃতীয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পরেই।
ইতালি ইসরায়েলকে হালকা হেলিকপ্টার ও নৌবাহিনীর বন্দুক সরবরাহ করেছে, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রনেতৃত্বাধীন F-35 যুদ্ধবিমান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।

“গাজায় ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কায় F-35 ও তার যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে স্থানান্তর নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।”

ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রোসেটো বলেছেন, ইতালি শুধুমাত্র ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর আগের চুক্তিগুলোর আওতায় অস্ত্র পাঠিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাজানি দাবি করেছেন, ইতালি এখন সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে যে এই অস্ত্র গাজার বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না।

দেশে প্রতিবাদ ও আইনি চাপ বৃদ্ধি

ইসরায়েলের গাজা অভিযান নিয়ে ইতালিতে ব্যাপক জনরোষ দেখা দিয়েছে। লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে ‘গাজা গণহত্যা বন্ধের’ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেশটির বড় বড় শ্রমিক ইউনিয়ন এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে। এমনকি ইতালির বন্দর শ্রমিকরাও ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে, যদি গাজাগামী সাহায্যবাহী জাহাজে বাধা দেওয়া হয়।

সম্প্রতি মেলোনির সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য বহরকে রক্ষা করতে নৌবাহিনী পাঠিয়েছিল, তবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকা আটকানোর পর সরকার পিছু হটে।
ফ্লোটিলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, এখনও ছয়জন ক্রু সদস্য ইসরায়েলি হেফাজতে আছেন।

এদিকে, এই মামলাটি ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা আইনি চ্যালেঞ্জের অংশ।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল।
তবে চলতি বছরের এপ্রিলে আইসিজে নিকারাগুয়ার জার্মানির বিরুদ্ধে আনা অনুরূপ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল।

 

news