দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য চলে আসছে। কিন্তু এখন সেই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবোটিকস এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ উৎপাদনে বিপুল বিনিয়োগ করছে।
সম্প্রতি এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং সতর্ক করে বলেছেন, “চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের চিপ উন্নয়নে মাত্র ‘ন্যানোসেকেন্ড’ পিছিয়ে।”
এআই দুনিয়ায় চীনের ঝড়
২০২৪ সালে তুলনামূলকভাবে অপরিচিত চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক যখন ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি-এর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকাশ করে, তখন গোটা প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোড়ন পড়ে যায়।
এই কোম্পানি অল্প খরচে এবং কম সংখ্যক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপ ব্যবহার করেই উন্নত এআই মডেল তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর ঘোষণার পরই এনভিডিয়ার শেয়ারমূল্য সাময়িকভাবে নিচে নেমে যায়।
এরপর থেকেই আলিবাবা, হুয়াওয়ে, টেনসেন্টসহ চীনের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—তারা এখন নিজস্ব চিপ তৈরি করে এনভিডিয়ার বিকল্প হতে চায়।
আলিবাবা ও হুয়াওয়ের চিপ বিপ্লব
চীনের সরকারি গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর মাসে আলিবাবা এমন একটি নতুন চিপ উন্মোচন করেছে, যা এনভিডিয়ার H20 প্রসেসর-এর সমান পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম—এমনকি কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও।
অন্যদিকে, হুয়াওয়ে ইতোমধ্যেই নিজস্ব এআই চিপ ও ডেটা সেন্টার সমাধানে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, যা পশ্চিমা প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞার পর দেশীয় বিকল্প তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
এনভিডিয়ার সিইও হুয়াং স্বীকার করেছেন, “চীনের প্রযুক্তি খাত অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্যমী। এটি আধুনিক শিল্প, যেখানে দক্ষ মানবসম্পদ প্রচুর।”
তিনি আরও বলেন, “বাঁচতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিযোগিতা করতেই হবে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের চিপ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে—বিশেষ করে জটিল ডেটা অ্যানালিটিক্স ও প্রেডিকটিভ এআই-এর ক্ষেত্রে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানী জাওয়াদ হাজ-ইয়াহিয়া বলেন, “চীনা চিপ প্রেডিকটিভ এআই-তে প্রায় সমান পর্যায়ে পৌঁছেছে, তবে জটিল বিশ্লেষণমূলক কাজে এখনও ঘাটতি আছে। ফারাকটা কমছে, কিন্তু পুরোপুরি কাটাতে সময় লাগবে।”
‘বার্গেনিং চিপ’ কৌশলে চীন
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই চিপ বিপ্লব কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য ও শুল্কযুদ্ধের কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করছে।
চীন দেখাতে চাইছে, তারা স্বনির্ভর হতে চলেছে। কিন্তু বাস্তবে তারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপের ওপর নির্ভরশীল।
সেমিকন্ডাক্টর ইঞ্জিনিয়ার রাঘবেন্দ্র আনজনাপ্পা বলেন, “কম উন্নত টুলে চীন স্বাধীন হতে পারবে, কিন্তু জটিল এআই প্রশিক্ষণে এখনো মার্কিন চিপ অপরিহার্য।”
যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে চীনের সবচেয়ে বড় বাধা। তবু বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বর্তমান গতিতে চললে চীন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই উচ্চমানের চিপ উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কাটাতে পারবে।


