কম্বোডিয়া এবার মুসলিম পর্যটকদের মন জয় করতে নেমেছে এক অভিনব উদ্যোগে। দেশটি তাদের মুসলিম সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গ্রামীণ জীবনধারাকে তুলে ধরতে এক নতুন পর্যটন প্রচারণা শুরু করেছে। মূল লক্ষ্য — এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর পর্যটকদের আকৃষ্ট করা।
বৌদ্ধপ্রধান দেশ কম্বোডিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে পরিচিত তাদের প্রাচীন মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য। কিন্তু খুব কম মানুষই জানে, এখানেও রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন মুসলিম ঐতিহ্য। বর্তমানে দেশটির প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ (প্রায় ৫%) মুসলিম নাগরিক বসবাস করেন।
কম্বোডিয়ার সংস্কৃতি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি ইয়ব আহাসকারি বলেন,
“আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদগুলোকে পর্যটন আকর্ষণে রূপান্তর করতে কাজ করছি। যেখানে মুসলিম কাম্পং (গ্রাম) আছে, সেসব জায়গায় বিদেশি পর্যটকরা এসে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সরাসরি দেখতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, কম্বোডিয়ায় মুসলমানদের স্থানীয়ভাবে ‘চাম মুসলিম’ বলা হয়, যাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, পোশাক ও ঐতিহ্য।
সম্প্রতি দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজন করেছে এক বিশেষ মেলা, যার থিম ছিল —
“আসসালামু আলাইকুম কম্বোডিয়া: একটি নিরাপদ, উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ গন্তব্য।”
এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় ৯ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত আল-সেরকাল মসজিদে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে।
ইয়ব আহাসকারি আরও জানান,
“আমাদের দেশে প্রায় ৬৫০টি মসজিদ রয়েছে। বিশেষ করে মেকং নদীর তীরে অবস্থিত শতবর্ষী কাঠের মসজিদগুলোকে আমরা পর্যটন স্পটে পরিণত করছি। এই মসজিদগুলো আজও নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয় — এবং এগুলো আমাদের সহাবস্থানের প্রতীক।”
অর্থনীতির বড় অংশ পর্যটন নির্ভর কম্বোডিয়া গত বছর প্রায় ৬০ লাখ বিদেশি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫ লাখ মুসলিম পর্যটক ছিলেন। এই সংখ্যা বাড়াতে সরকার জোর দিচ্ছে সহজগম্যতা, পরিবেশ, যোগাযোগ ও সেবার মানোন্নয়নে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ ইউনুস বলেন,
“আমরা মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি বিমান সংযোগ বাড়াচ্ছি। বর্তমানে চারটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন মুসলিম দেশ থেকে কম্বোডিয়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করছে। শিগগিরই আরও দুটি নতুন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে কম্বোডিয়া শুধু মুসলিম পর্যটন নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকেও বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায়।
